আর জি কর কাণ্ডের পরে ছাত্রীদের ‘আত্মরক্ষার পাঠ’ দিতে উদ্যোগী হল পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। আপাতত শহরের দু’টি স্কুলকে বেছে নিয়ে ‘পাইলট প্রজেক্ট’ শুরু করেছে জেলা পুলিশ। গোটা জেলার সব স্কুলেই ক্যারাটে-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে বলে ঠিক করেছে পুলিশ। ওই দু’টি স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করছে, আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতে এই ‘বিশেষ’ ব্যবস্থা ছাত্রীদের খুবই উপকারে আসবে।
জেলা পুলিশ জানিয়েছে, ৫০ জন করে ছাত্রী নিয়ে শহরের হরিসভা হিন্দু গার্লস ও বিদ্যার্থী গার্লস হাইস্কুলে মঙ্গলবার থেকে এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। ১৫ দিন ধরে দেড় ঘন্টা করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বিশেষ প্রশিক্ষকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষিকারাও ক্যরাটে শেখার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তাঁরাও ক্যারাটের খুঁটিনাটি শিখছেন। ছাত্রীদের লাইনে তাঁরাও দাঁড়িয়ে পড়ছেন।
জেলার বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যেকের আত্মরক্ষার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা উচিত। অনেক স্কুল শরীর শিক্ষার ক্লাসে আত্মরক্ষার পাঠ দিয়ে থাকে। এর আগেও জেলা পুলিশ স্কুলে গিয়ে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। কিন্তু আর জি করের চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের ঘটনা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মনে ধাক্কা দিয়েছে। অভিভাবকরাও মনে করছেন, আত্মরক্ষার জন্য ক্যারাটে প্রশিক্ষণের বিশেষ প্রয়োজন। অনেকেই ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দিতে মেয়েদের নিয়ে যেতে শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে স্কুলে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে অনেক ছাত্রী ‘আত্মরক্ষার পাঠ’ নিতে পারবে।
জেলা পুলিশের দাবি, মহিলাদের নিরাপত্তার জন্যে ‘উইনার্স টিম’ রয়েছে। ছাত্রীদের স্কুলের সামনে স্কুটার নিয়ে তাঁরা টহল দেয়। শুধু পুলিশের অন্দরে নয়, আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণের মঞ্চটাকে আরও বড় করার লক্ষ্যেই স্কুলের ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের দাবি, জনবহুল এলাকা বা মেলায় মেয়েদের উপরে হামলার ঘটনা ঘটলে পুলিশ পৌঁছাতে-পৌঁছাতে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। গোড়ায় মেয়েরা যদি কিছু কৌশল নিতে পারে, তাহলে এমন ঘটনা অনেকটা রোখা যায় বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের উপস্থিত বুদ্ধির জোরেও দুষ্কৃতী ধরা পড়ে যায়। সে জন্যই পুলিশ ছাত্রীদের আত্মরক্ষার পাঠ দিতে চাইছে বলে জানান কর্তারা। ছাত্রীদের মধ্যেও ক্যারাটে প্রশিক্ষণে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রাথমিক আত্মরক্ষা যাতে করতে পারে, সে জন্যে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। স্কুল-কলেজ ছাড়াও সাধারণ মহিলারাও যাতে বিশেষ কিছু কৌশলের পাঠ নিতে পারেন, সেটাও আমাদের ভাবনায় রয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কথা হচ্ছে।’ প্রশিক্ষণ নেওয়া ছাত্রীরা বলে, ‘আমাদের পক্ষে আলাদা ভাবে কোথাও গিয়ে ক্যারাটে শেখা সম্ভব নয়। তাই স্কুলে শেখানো হবে শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছি। সব সময় অভিভাবকদের নিয়ে বাইরে বের হওয়া সম্ভব নয়। নিজেদের জন্য তো বটেই, প্রয়োজনে যাতে আশপাশের কাউকেও সাহায্য করতে পারি, সেটাও শেখানো হচ্ছে।’ ওই দু’টি স্কুলের শিক্ষিকিরা বলেন, ‘বর্তমান সময়ে পুলিশের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ক্যারাটের কৌশল শেখা খুবই জরুরি।’