জন্মের সময় থেকে দুটি হাতই নেই। তাই সাধ থাকলেও প্রভু জগন্নাথ দেবের রথের রশি টানতে পারেন না প্রতিবন্ধী জগন্নাথ বাউরি। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের এই জগন্নাথ রথের দিন প্রভু জগন্নাথদেবের স্মরণে ব্রতী হন ঠিকই, তবে দু হাত না থাকার জন্য রথের রশি টানতে না পারার বেদনা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
আউশগ্রাম ১ ব্লকের বেরেন্ডা পঞ্চায়েতের বেলুটী গ্রামে বাড়ি বছর ৩৫ বয়সী জগন্নাথ বাউরির। তিনিই বাড়ির বড় ছেলে। ছোট ভাইয়ের নাম বলরাম। জগন্নাথবাবু বলেন, জন্মের সময় থেকেই তাঁর দুটি হাত নেই। তখন থেকেই গ্রামের সবাই তাঁকে জগন্নাথ দেবের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘তাঁর বাবা লক্ষণচন্দ্র বাউরি ও মা সুমিত্রা বাউরি মনে করতেন প্রভু জগন্নাথ দেবের আশীর্বাদেই একদিন তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য শৈশবে তাঁর বাবা তাঁকে বেলুটী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। তদানিন্তন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভূতনাথ পাল মহাশয় বাবাকে বলেন, প্রভু জগন্নাথ দেবকে স্মরণ করে তোমার ছেলের নাম রাখো জগন্নাথ। বাবা প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের সেই কথা মেনে নেন।’ সেই থেকে জগন্নাথ বাউরি নামেই তাঁর পরিচিতি হয়। শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা।

দিন আনা দিন খাওয়া বাউরি পরিবারে সকলের আজও সবেতেই ভরসা প্রভু জগন্নাথ দেবের উপরেই। একসময়ে বাবা-মা ক্ষেতমজুরির কাজ করে সংসার চালাতেন। জগন্নাথ বাউরি বলেন, ‘তাঁর পা ধরে পায়ে পেন্সিল গুঁজে দিয়ে লেখা শিখিয়ে ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভূতনাথ পাল।’ পা দিয়ে লেখালেখি শিখেতে পারার পর থেকেই তাঁর লেখাপড়া শেখার আগ্রহ বাড়ে। শত কষ্টের মধ্যেও তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যান। সাফল্যের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বেসিক ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি হন। ট্রেনিং সম্পূর্ণ করে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি পান। জগন্নাথবাবু বলেন, বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি আউশগ্রামের জয়কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। স্ত্রী লক্ষী, বাবা-মা ভাই-বোন সবাইকে নিয়ে এখন ভরা সংসার জগন্নাথ বাবুর। বিদ্যালয়ের সহকর্মী, ছাত্র-ছাত্রী সকলেই তাঁদের প্রিয় জগন্নাথ স্যারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

এই বাউরি পরিবার রথযত্রা উৎসবের দিনটি ভক্তি সহকারে পালন করেন। জগন্নাথ বাউরি বলেন, ‘প্রভু জগন্নাথ দেবের দুটি হাত নেই। তাঁরও জন্ম থেকে দুটি হাত নেই। সেকারণেই তাঁর নাম রাখা হয় জগন্নাথ। তাই জ্ঞান হওয়ার পর থেকে প্রভু জগন্নাথ দেবকেই নিজের ইষ্টদেবতা মেনে আসছেন।’ জগন্নাথ বাউরি জানান, প্রতিবছর রথযাত্রা উৎসবে তিনি যোগ দেন। প্রভুর প্রার্থনা করেন। কিন্তু দুটো হাতই নেই বলে রথের রশি টানতে পারেন না। আক্ষেপ প্রকাশ করে জগণ্নাথ বাউরি বলেন, ‘সাধ থাকলেও রথের রশি টানার সাধ এজীবনে আর পূরণ হবে না।’

বর্ধমান ডট কম-এর খবর নিয়মিত আপনার ফেসবুকে দেখতে চান?

Like Us On Facebook