স্বামীর তালিবানি মানসিকতার শিকার হলেন স্ত্রী। স্ত্রী সরকারি চাকরি পেয়ে স্বামীকে ছেড়ে চলে যাবেন এই আশঙ্কায় গুণধর স্বামী বন্ধুদের সাহায্যে টিন কাটা কাঁচি দিয়ে স্ত্রীর ডান হাতের কব্জি থেকে নীচের অংশ কেটে দিলেন। স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন এই ঘটনার পর ফেরার। নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার কোজলসা গ্রামে। জানা গেছে, কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল এবং বর্ধমান হাসপাতাল ঘুরে বর্তমানে রেনু খাতুন নামের আহত ওই গৃহবধূ দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সোমবার দুর্গাপুরের শোভাপুরের কাছে বেসরকারি হাসপাতাল থেকেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিযোগ করেন রেনু খাতুনের বাপের বাড়ির লোকজন।
রেনুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রামে শের মহাম্মদের সঙ্গে প্রেম করে কেতুগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের চিনিসপুরের রেনু খাতুনের বিয়ে হয়। স্নাতক এবং নার্সিং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রেনু ২০২০ সালে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি পান। স্ত্রী চাকরি করায় আপত্তি ছিল স্বামীর। সম্প্রতি রেনু সরকারি হাসপাতালে নার্সিংয়ের চাকরি পান। কয়েকদিনের মধ্যেই সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল রেনুর। সেই উদ্দেশ্যে শনিবার দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে বাড়ি ফেরেন।
এদিকে, সরকারি চাকরি করলে স্ত্রী ছেড়ে চলে যাবে বলে সন্দেহ ছিল গুণধর স্বামীর। তাই শনিবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে রানুর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হাতুড়ি দিয়ে হাত থেঁতলে টিন কাটার কাঁচি করে ডান হাতের কব্জি কাটা হয় বলে অভিযোগ। রেনুর বাবার বাড়ির লোকজনকে ফোন করে কাটা হাত নিয়ে যাওয়ার কথা জানায় শ্বশুর। বাবারবাড়ির লোকজন রেনুর শশুরবাড়িতে যতক্ষণে যান ততক্ষণে রেনুকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে পালায় অভিযুক্ত স্বামী ও বন্ধুরা। তারপর বাবারবাড়ির লোকজন কাটা হাত নিয়ে কাটোয়া হাসপাতাল থেকে বর্ধমান এবং পরে দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি করছে রেনুর বাবারবাড়ির লোকজন।
আইকিউসিটি হাসপাতালের সিইও ডা. পরমহংস মিশ্র বলেন, ‘রোগীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ঘটনার প্রায় ৬ ঘন্টা পরে আনা হয়েছিল, এত দেরীতে আসায় কাটা হাত জোড়া লাগানো সম্ভব ছিল না। তাই হাতের নীচের অংশ বাদ দেওয়ার জন্য সার্জারী করা হয়। বর্তমানে রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল।’