অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে কেতুগ্রামে বন্যপ্রাণী শিকার করতে গিয়ে বনদফতরের হাতে পাকড়াও ৩০ জন শিকারী৷ উদ্ধার ২৫০ টি মৃত বন্যপ্রাণী। শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বড়সড় অভিযান চালায় বনদফতর। রবিবার ধৃত ৩০ জনকে পেশ করা হয় কাটোয়া মহকুমা আদালতে। আটক একটি ট্রাক্টর, দুটি মোটর ভ্যান ও একটি মোটর বাইক।
বনদফতর সূত্রে জানা গেছে, অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে আদিবাসীদের শিকার উৎসব হয়৷ প্রতি বছর কেতুগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বীরভূম জেলা থেকে প্রচুর শিকারী আসেন। তাঁরা মূলত পাখি সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী শিকার করে নিয়ে যান৷ এবার আগে থেকেই তিনদিন ধরে নজর চালাচ্ছিল বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা হিউম্যান অ্যান্ড এনভায়োরেন্টমেন্ট অ্যালায়েন্স লিগ বা হিল নামক একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা৷ এদিন কেতুগ্রামের কোমরপুর ও গোপালপুর গ্রামের আশেপাশেই বীরভূম থেকে তীর, ধনুক, গুলতি সহ নানা শিকারের সরঞ্জাম নিয়ে বেশ কয়েকটি দল আসে৷ তাঁরা মোটর ভ্যান, ট্রাক্টর ও বাইক নিয়ে আসেন৷ সারাদিন ধরে তাঁরা শিকার করেন৷ বিকেলের দিকে বনদফতর ও হিলের লোকজন কেতুগ্রাম থানার পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালায়৷ তারপরেই রাতের দিকে ৩০ জন শিকারিকে আটক করে। তাঁদের ঝুলি দেখেই চোখ কপালে ওঠে বনদফতরের কর্মী-আধিকারিকদের৷ মৃত বন্যপ্রানীদের মধ্যে রয়েছে ১২ রকমের গোসাপ, বনবিড়াল, কাঠঠোকরা পাখি, নেউল, বক, শালিক, ডাহুক সহ নানা প্রজাতির পাখি।
হিলের সদস্যরা জানান, মৃত বন্যপ্রাণীর সংখ্যা প্রায় ২৫০। রাতেই কেতুগ্রাম থানায় যান কাটোয়া রেঞ্জের রেঞ্জার শিবপ্রসাদ সিনহা। তিনি বলেন, ‘শিকারিদের আটক করা হয়েছে৷ মূলত বাদনা পরবের পর আদিবাসীরা জঙ্গল এলাকায় শিকারে বের হন। এ সময় তাঁরা জঙ্গলের প্রাণী শিকার করে নিয়ে আসেন। প্রাচীন এই রীতিকে বজায় রাখতেই প্রতিবছর আউশগ্রামের ভালকি, ১১ মাইল, ডাঙ্গাপাড়া পাথরকুচি, ছোড়া, ন’পাড়া, মঙ্গককোট, কেতুগ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে আদিবাসীরা শিকারে আসেন। পাশ্ববর্তী বীরভূম জেলা থেকেও শয়ে-শয়ে আদিবাসী মানুষজন শিকারে আসেন। তাঁরা সুসজ্জিত হয়ে আসেন। হাতে লাঠি, বর্শা, ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বন্যপ্রাণী শিকার করেন। এই শিকারি দলের সঙ্গে আবার শিকারি কুকুরও থাকে। তারপর তাঁরা তীর ধনুক, বর্শা ছুঁড়ে শিকার করেন। কিন্তু অম্বুবাচীতেও শিকারে বের হচ্ছেন শিকারিরা৷ বনদফতর শিকার উৎসবকে কেন্দ্র করে বন্যপ্রাণ রুখতে ধারাবাহিক প্রচার চালায়। শুধু তাই নয়, আদিবাসী মহল্লা গুলিতে আদিবাসী ভাষাতেই প্রচার চালানো হয়। তবুও শিকার ঠেকানো যাচ্ছে না।’