গত বছরও বিদেশে পাড়ি দিয়েছিল তাঁর শিল্পকর্ম। কলকাতার অনেক বিগ বাজেটের পুজোতেও মূর্তি বানিয়েছেন তিনি। কিন্তু, এবারে অতিমারি পরিস্থিতিতে সময় পেরিয়ে গেলেও মেলেনি বরাত। দিন বদলের আসায় রয়েছেন বর্ধমানের শিল্পী সিদ্ধার্থ পাল। গত বছর করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কিছু বরাত মিললেও এবছর বড় বাজেটের মূর্তি গড়ার দিকে এগোচ্ছে না পুজো উদ্যোক্তারা। কাজেই ছাঁচের মূর্তির বাইরে থিম বা শিল্পীর তৈরি মূর্তির কোনও বরাত পাওয়া যাচ্ছে না। এই ধরণের মূর্তি তৈরিতে সময় বেশি লাগে। এছাড়া অনেক সময় বিদেশেও পাড়ি দেয় মূর্তি। তাই অনেক আগে থেকেই অর্ডার আসা শুরু হয়। কিন্তু, এবছর পুজোর আর সামান্য কয়েকটা দিন বাকি, এখনও কোনও অর্ডার আসেনি। এরপর অর্ডার আসলেও বড় কাজ করা সম্ভব নয় বলে জানান শিল্পী।
২০০০ সাল থেকে গুরু প্রথিতযশা শিল্পী হরিহর দে’র হাত ধরে শুরু হয় পথ চলা। ২০০৭ সাল থেকে নিজেই মূর্তি তৈরির কাজ করে আসছেন সিদ্ধার্থ পাল। ২০০৯ সালে তাঁর তৈরি কলা গাছের ছাল দিয়ে করা মূর্তি কলকাতার একটি পুজো মন্ডপে গিয়েছিল। সে বছর সেরা মূর্তি হিসেবে স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন তিনি। এরপর এশিয়ান পেন্টস শারদ সম্মান পেয়েছিলেন ২০১০ সালে। সে বছর তাঁতের সুতো ও জারির কাজে তৈরি মূর্তি সেরার শিরোপা পায়। গত বছর তাঁর তৈরি লক্ষ্মী, সরস্বতীর মূর্তি নরওয়ে পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু, এবছর কোনও পুজো উদ্যোক্তার তরফে মূর্তি তৈরির ডাক আসেনি।
শিল্পী জানিয়েছেন, সাধারণ ছাঁচে গড়া মূর্তির থেকে অনেকটাই আলাদা তাঁদের কাজ। এই ধরণের কাজ এক্কেবারেই শিল্পীর মস্তিস্ক প্রসূত। এই সমস্ত কাজের জন্য কোনও নির্দিষ্ট ছাঁচ আগে থেকে তৈরি থাকে না। পুরোটাই অর্ডার পাওয়ার পর চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করতে হয়। ফলে সময় অনেক বেশি লাগে। অন্যান্য বছর এপ্রিল মাস থেকেই কাজ শুরু করে দিতে হয়। প্রতি বছর ৭-৮টি মূর্তি তৈরির অর্ডার আসে। নরওয়ে একটি পুজোর জন্য ৫ ফুটের একটি দুর্গা প্রতিমা তৈরির কথা চলছিল। তবে এখনও উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘পুজোর আর যেকটা দিন বাকি আছে তাতে বড় কাজ হাতে নেওয়া মুশকিল। এই পরিস্থিতিতে ছোট কাজের দিকে ঝুঁকতে হবে। এক সময় ব্যস্ততার জন্য যে সব কাজ হাতে নেওয়া সম্ভব হত না। সেগুলিই এখন ভরসা।’ অতিমারির কারণে তাঁর মতো অনেক শিল্পীরই একইরকম অবস্থা। গত বছর লকডাউনের আগেই কিছু কাজের অর্ডার এসে গিয়েছিল। এবছর তা হয়নি। টানা লকডাউন। ফের করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি। এই সব পুজোর আয়োজনে প্রভাব ফেলেছে। পাশাপাশি, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনায় পুজো উদ্যোক্তারা ঝুঁকি নিচ্ছেন না বলে মনে করছেন শিল্পী। স্বভাবতই এবছর হতাশা তাঁর চোখে মুখে।