পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল বাবা ও ছেলের। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে মেমারি থানার অন্তর্গত কলানবগ্রাম কোঙার পাড়ায়। মৃতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রেমালের তাণ্ডবে ভেঙে পড়া কলাগাছ কাটতে গিয়ে হুকিং এর বিদ্যুৎবাহী তারের সংস্পর্শে আসতেই ঘটে যায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা। মৃতদের নাম ফড়ে সিং(৬৪) ও তরুণ সিং(৩০)। সম্পর্কে তাঁরা বাবা-ছেলে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রেমালের তাণ্ডবে ভেঙে যাওয়া কলা গাছ কাটতে গিয়ে প্রথমে বাবা ফড়ে সিং বিদ্যুৎবাহিত তারের সংস্পর্শে চলে আসেন। বাবাকে বাঁচাতে এসে ছেলে তরুণ সিং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তড়িঘড়ি স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে বড়শুল হাসপাতাল ও পরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বাবা ও ছেলে দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বর্ধমান হাসপাতালে ছুটে আসেন মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য। মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এদিকে, এই ঘটনায় বিদ্যুৎ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে মৃত ফড়ে সিংহের প্রতিবেশী তার দিয়ে হুকিং করেছিল। সেই তারের সংস্পর্শে আসার জন্যই ওনারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ দপ্তরের কোনো দায় নেই। অন্যদিকে হুকিং করার এই ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে।
অপরদিকে, রেমালের প্রভাবে রবিবার রাত থেকেই গোটা জেলা জুড়ে দমকা ঝোড়ো হাওয়া এবং তার সাথে একটানা বৃষ্টি হয়েই চলেছে। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দপ্তরের আধিকারিক প্রতীক ব্যানার্জী জানিয়েছেন, রেমালের প্রভাবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও পূর্বস্থলীতে একটি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। জেলায় সবথেকে ক্ষতি হয়েছে কেতুগ্রাম ১ ও ২ ব্লকে, রায়না ২ ব্লকে এবং পূর্বস্থলী ২ ব্লকে। জেলায় ৪৩টি কাঁচা বাড়ির আংশিক এবং ৫টি কাঁচা বাড়ির সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। মোট ৩১টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৪.৩ মিলিমিটার। তিনি জানিয়েছেন, জেলায় কোথাও ত্রাণ শিবির খোলা বা কোনো মানুষজনকে সরাতে হয়নি। নামাতে হয়নি উদ্ধারকারী বোটও। যদিও দুর্গতদের জন্য ত্রিপল এবং কিছু জামাকাপড় পাঠানো হয়েছে। প্রতীকবাবু জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত রাজ্য আবহাওয়া দপ্তর থেকে তাঁদের যা জানানো হয়েছে তাতে সোমবার মধ্যরাত থেকেই দুর্যোগের প্রভাব কমতে থাকবে। মঙ্গলবার বিকাল থেকে দুর্যোগ কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা। অপরদিকে, রেমালের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকায় সাধারণ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। যদিও জেলার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের কাজ চলছে।