সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে গুমটি

বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় ‘ভারতমালা’ প্রকল্পে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)। এর জন্যে আনুমানিক চার হাজার কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ডানকুনি থেকে পালসিট ও পানাগড় থেকে পালসিট পর্যন্ত দু’টি ভাগে রাস্তার কাজের জন্যে দরপত্র ডাকা হয়েছিল। আন্তর্জাতিকস্তরের দু’টি সংস্থা চলতি মাস থেকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা মতো কাজের দায়িত্ব নিয়েছে। বুধবার পানাগড় থেকে বর্ধমানের ফাগুপুর পর্যন্ত রাস্তার ধারে থাকা দখলদারদের উচ্ছেদের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কলকাতা মণ্ডলের মুখ্য জেনারেল ম্যানেজার আর পি সিংহ বলেন, ‘সম্পূর্ণ নতুনভাবে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েটি তৈরি করা হবে। আড়াই বছরের মধ্যে রাস্তার কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পুরো রাস্তা জুড়ে অসংখ্য আন্ডারপাস তৈরি হবে, উড়ালপুলের সংখ্যাও বাড়বে। ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখার জায়গার(Truck lay bay) সংখ্যা না বাড়লেও গাড়ি রাখার জন্যে জায়গা বাড়ানো হবে। এই রাস্তার উপরেই শক্তিগড়ের ‘ল্যাংচা হাব’। ব্যবসায়ীদের যাতে অসুবিধা না হয়, তার জন্যে শক্তিগড়ের দু’প্রান্তেই ‘আন্ডারপাস’ করা হবে।’ ঠিকাদার সংস্থার কর্তা দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘মূল রাস্তা থেকে আন্ডারপাস দিয়ে সার্ভিস রোড ধরে ল্যাংচা হাবে পৌঁছানো যাবে। গাড়ি রাখতেও ক্রেতাদের অসুবিধা হবে না। আবার আন্ডারপাস দিয়েই মূল রাস্তায় উঠতে পারবেন ক্রেতারা।’ পুরো রাস্তার দু’দিকে শক্তপোক্ত রেলিং দিয়ে ঘেরা থাকবে। যাতে সার্ভিস রোড থেকে কেউ মূল রাস্তায় উঠতে না পারে। এ ছাড়াও মূল রাস্তা, সার্ভিস রোড পর্যাপ্ত আলো থাকবে।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথমে সার্ভিস রোড তৈরি হবে। তারপরে মূল রাস্তা চার লেন থেকে ছ’লেন তৈরির কাজে হাত দেওয়া হবে। মূল রাস্তা চওড়া করার সময় সার্ভিস রোড দিয়েই গাড়ি যাতায়াত করবে। বর্তমানে পালসিট থেকে পানাগড় পর্যন্ত সাতটি জায়গাতে আন্ডারপাস রয়েছে, সেখানে ৪১টি জায়গাতে আন্ডারপাস করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়াও চারটে উড়ালপুল, আরও তিনটি জায়গাতে উড়ালপুল করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বর্ধমান শহরেরও ভোল পাল্টে যাবে। নবাবহাট ও উল্লাস মোড়ে নতুন করে দু’টি উড়ালপুল হবে। যার সংযোগকারী রাস্তা শহরের ভিতরেও নামবে। এ ছাড়াও গোদার কাছে, লাকুর্ডি, রথতলা, তেজগঞ্জ, আঁজিরবাগান, বেচারহাট, কানাইনাটশালে আন্ডারপাস তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এরইমধ্যে কানাইনাটশাল থেকে চারশো মিটার দূরে পাল্লা-শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দারা আন্ডারপাস চেয়ে বিভিন্ন জায়গাতে চিঠি করেছেন। তাঁদের দাবি, তাঁদের এলাকায় দুর্ঘটনায় ফি বছর প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়। রাস্তার ধারে আনাজের পাইকারি ব্যবসা রয়েছে, বড় বসতিও আছে। বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার ভাইস-চেয়ারম্যান আইনুল হক বলেন, ‘এ নিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্যে বৈঠক ডাকা হয়েছে।’ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই এলাকা পরিদর্শনও করা হয়েছে।

এছাড়াও পানাগড় থেকে পালসিট পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বাস দাঁড়ানোর জায়গা করা হবে। তেলিপুকুরে সব রকমের সুবিধা-সহ বাসস্ট্যান্ড করারও পরিকল্পনা রয়েছে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে চলন্ত গাড়ির ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। একটি তদন্তে উঠে এসেছে, দীর্ঘ রাস্তায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখার জায়গা খুবই কম। ফলে, ট্রাক রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির গতিবেগ বেশি। চালকেরা অনেকসময়ই গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটে। সে জন্যে ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখার জায়গা(Truck lay bay) গুলিকে আরও লম্বা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যাতে আরও বেশি সংখ্যক ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। সেখানে ট্রাক রাখা ছাড়াও চালকদের খাওয়া, বিশ্রাম ও শৌচাগারের আধুনিক ব্যবস্থা থাকবে।

Like Us On Facebook