নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে গত ৪ মার্চ ঘটা করে চিঠি দিয়ে তাঁদের জানানো হয়েছিল যে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক তাঁদের পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি ১নং ব্লকে নির্বাচনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তথা আইকন করা হচ্ছে। অথচ নির্বাচন পর্ব মিটে যাওয়ার পর সেই মেমারির কলানবগ্রামের দুই খর্বকায় ভাই সঞ্জীব মণ্ডল এবং মানিক মণ্ডলের খোঁজ কেউ রাখেনি। তাঁদের অভিযোগ, করোনাকালে বারবার জেলা তথা ব্লক প্রশাসনের কাছে তাঁরা ভ্যাকসিনের জন্য আবেদন জানালেও ভ্রাতৃদ্বয়ের জোটেনি কোনো কোভিড ভ্যাকসিন। বুধবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য। মেমারি-১-এর বিডিও ডা. আলি মহম্মদ ওয়ালি উল্লাহ জানিয়েছেন, তাঁর কাছে ওই দুই ভাই আসেননি। হয়তো অন্য কোথাও আবেদন জানিয়েছেন। তবুও বিষয়টি তিনি জানার পরই দ্রুত তাঁরা যাতে ভ্যাকসিন পান – তার ব্যবস্থা করবেন।
উল্লেখ্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে অন্যান্যবারের মতই নির্বাচন কমিশন প্রতিটি জেলায় জেলায় আলাদা আলাদা করে ভোটের প্রচারের জন্য বিভিন্ন ধরণের মানুষকে যুক্ত করেন। গত বিধানসভা ভোটের জন্যও বর্ধমান থেকে এই দুই ভ্রাতৃদ্বয়কে নির্বাচন করে জেলা প্রশাসন। তাঁরা মেমারি ১নং ব্লক জুড়ে ভোটদানে উৎসাহ বাড়াতে চষে বেড়িয়েছিলেন। নির্ভয়ে ভোট দিন, সকাল সকাল ভোট দিন, নিজের ভোট নিজে দিন সহ আশি উর্ধ্বদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে উৎসাহ জোগানোর কাজ করেছেন। এমনকি তাঁরাও পোস্টাল ব্যালটেই এবার বিধানসভা ভোট দিয়েছেন।
সঞ্জীব মণ্ডল এবং মানিক মণ্ডলরা জানিয়েছেন, তাঁরা আর পাঁচটা সাধারণের মত চলা ফেরা করতে পারেন না। চলাফেরা করেন হুইল চেয়ারে। তার মধ্যে চলছে করোনা আবহ। ফলে সশরীরে তাঁরা ভ্যাকসিনের জন্য কোথাও আবেদন জানাতে পারেননি। ফোনেই আবেদন জানিয়েছেন প্রশাসনিক স্তরে। কিন্তু করোনার প্রথম, দ্বিতীয় ঢেউয়ের শেষে তৃতীয় ঢেউ ঢুকতে চললেও তাঁরা ভ্যাকসিন পাননি। ফলে কিছুটা আতঙ্কেই দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। এই দুই ভাই জানিয়েছেন, গত ৪ মার্চ মেমারি ১নং ব্লকের বিডিও অফিস থেকে তাঁদের কাছে চিঠি আসে। ৬ মার্চ বিডিও অফিসে তাঁদের দুইভাইকে স্বশরীরে হাজির হতেও বলা হয়। এরপর যথারীতি তাঁদের দুই ভাইকে ভোটের প্রচারে নির্বাচন কমিশন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে নিয়োগ করেন। তাঁরা তাঁদের কর্তব্যও পালন করেন। কিন্তু তারপর আর কেউ ফিরেও তাকায়নি তাঁদের দিকে। এমনকি তাঁদের নিকটবর্তী পাল্লারোড স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বারবার গিয়ে ঘুরে আসতে হচ্ছে তাঁদের। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, পরে খোঁজ নেবেন। এমনকি স্থানীয় আশাকর্মীরাও তাঁদের প্রতিবন্ধী হিসাবে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগও নেননি বলে জানিয়েছেন ভ্রাতৃদ্বয়। যদিও বিষয়টি বুধবার জানার পরই দ্রুত বিধানসভা ভোটে নির্বাচন কমিশনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এই দুই ভাইকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিডিও। এখন দেখার কবে মেলে এই দুই ভাইয়ের ভ্যাকসিন।