পারিবারিক পুজো থেকে বারোয়ারি। সনাতনী পুজো থেকে থিমের পুজোয় কার্যত পঞ্চমী থেকেই গোটা দেশের সঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও মাতোয়ারা সাধারণ মানুষ। করোনার জেরে প্রায় ২ বছর ঘরবন্দি হয়ে থাকা মানুষের ঢল নেমেছে পঞ্চমী থেকেই গোটা জেলা জুড়ে। দিনরাত একাকার করে প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে মানুষের ভিড়। প্রতিবছরের মত এবারেও দুর্গাপুজোয় বর্ধমান শহরের সঙ্গে কোমড় বেঁধে লড়াই করছে বড়শুলের জাগরণী, বড়শুল ইয়ংমেনস ক্লাব, অন্নদাপল্লী ক্লাব।
বর্ধমান শহরের বড় পুজোগুলোর মধ্যে ঘোড়দৌড়চটি সার্বজনীন পুজো কমিটির এবারের থিম দৃষ্টিকোণ। লাল্টু স্মৃতি সংঘের থিম চালচিত্র। শহীদ নিবাস স্মৃতি সংঘের থিম সবুজে প্রাণ। বাজেপ্রতাপপুর ট্রাফিক কলোনীর থিম প্রেম নগর বৃন্দাবন। কেশবগঞ্জ বারোয়ারি পুজো কমিটির থিম ব্রাত্যজনের সংস্কৃতি। কিরণ সংঘের থিম ব্রহ্ম সত্য জগত সত্য। নারকেলবাগান সর্বজনীন পুজো কমিটির থিম সুরলোকে দেবীর আগমন। লক্ষ্মীপুর সর্বজনীন পুজো কমিটির থিম দুয়ারে বদ্রীনাথ ধাম। ইছলাবাদ ইয়ুথ ক্লাবের থিম ওরা আজও বিদ্যমান। তেলিপুকুর সুকান্ত স্মৃতি সংঘের থিম নারী শক্তি। জোড়ামন্দির পুজো কমিটির থিম মহিষাসুর বধ। খোসবাগান সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির থিম সোনার কেল্লা। সর্বমিলন সংঘের থিম আদি যোগী। আলমগঞ্জ বারোয়ারির থিম রাজস্থানে শিল্প খোঁজা বাংলার দুর্গা পুজা। ময়ূরমহল মাতৃ সংঘের থিম এ এক অন্য জগতে মা। পাড়াপুকুর দুর্গাপুজো কমিটির থিম জলই জীবন। পিসি মিত্র লেন ও জিটি রোড দুর্গাপুজো কমিটির থিম পুরীর জগন্নাথ। রাণীসায়র উত্তরপাড় নেতাজী সংঘের থিম বিপদে বিহঙ্গ। বড়শুলের বড়শুল ইয়ংমেনস অ্যাসোসিয়েশনের থিম পাঞ্জাবের স্বর্ণমন্দির।
কমবেশী এবারের পুজোর বাজেট ৫ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। তবে গোটা বর্ধমান শহর এবং শহর সংলগ্ন এলাকার মধ্যে যথাক্রমে বাজেপ্রতাপপুর ট্রাফিক কলোনী এবং বড়শুল ইয়ংমেনস অ্যাসোসিয়েশন বা বাইমার থিমকে ঘিরে গোটা জেলা জুড়েই তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। পাঞ্জাবের স্বর্ণমন্দির এবং তার পরিবেশকে নিখুঁতভাবে উপস্থাপনার চেষ্টা করা হয়েছে ইয়ংমেনস অ্যাসোসিয়েশনের মণ্ডপে। ফলে দর্শকদরে ঢল নামছে সকাল থেকেই। এরই পাশাপাশি এবার গোটা জেলা জুড়ে চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বাজেপ্রতাপপুর ট্রাফিক কলোনীর পুজোকে ঘিরে। প্রেম নগর বৃন্দাবন। আস্ত বৃন্দাবনকেই যেন তুলে নিয়ে আসা হয়েছে এই মণ্ডপসজ্জায়। বর্ধমানের কাঞ্চননগরের শিল্পীদের হাতে তৈরি এই মণ্ডপের উদ্বোধন হয়েছে চতুর্থীতে। ক্লাবের সভাপতি তথা বর্ধমান পুরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার নুরুল আলম জানিয়েছেন, প্রেমই পাড়ে গোটা দেশের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বকে দৃঢ় করতে। হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে প্রেমভাব জাগ্রত হোক – এটাই তাঁদের লক্ষ্য। গোটা মণ্ডপ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের রাসলীলা সহ নানান খণ্ড চিত্র। এই মণ্ডপ যে সাধারণ মানুষের মধ্যে রীতিমত প্রভাব ফেলেছে, তার অন্যতম লক্ষণ – বহু মহিলা আসছেন সঙ্গে গোপালের মূর্তিকে নিয়ে। যাঁরা খালি হাতে আসছেন তাঁদেরও বলতে শোনা গেছে, গোপালকে (শ্রীকৃষ্ণের বালরূপ) একবার দেখাতে হবে। নুরুল আলম জানিয়েছেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই দৃশ্য দেখে তাঁরা সত্যিই আপ্লুত হয়ে উঠেছেন। তাঁরা ভাবতেও পারেননি সাধারণ মানুষের কাছে এতটাই গ্রহণযোগ্য হবে এই মণ্ডপসজ্জা। পরিবেশের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দিনরাত চলছে রাধাকৃষ্ণের গান। জায়গায় জায়গায় বেজে চলেছে কৃষ্ণের বাঁশির সুর।