রবিবার দুপুরে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে বেধড়ক মার খাওয়ার অভিযোগ উঠল বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাশ করা এক ডাক্তার এবং তাঁর আত্মীয়দের ওপর। এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ২০০৭ সালে ডাক্তারি পাশ করা ছাত্র তথা বর্তমানে মন্তেশ্বর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ডা. পীযূষ মজুমদার জানিয়েছেন, এদিন তাঁর এক দূর সম্পর্কীয় দাদা সমীর দেবনাথের ছেলে দেড় বছরের আয়ুষ্মান দেবনাথকে দেখতে তিনি শিশু বিভাগে যান। শনিবার ওই শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ডায়রিয়াজনিত কারণে। কিন্তু তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তিনি আসেন।
পীযূষবাবু অভিযোগ করেছেন, শিশুটির চিকিৎসা যথাযথ না হওয়ায় এবং তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এদিন তিনি এবং দাদা সমীর দেবনাথ এবং বৌদি বর্ণশ্রী দেবনাথ মিলে শিশুটিকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। ইতিমধ্যে হাসপাতালের ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে যায়। সেই সময় একজন নিরাপত্তারক্ষী এসে তাঁদের ওয়ার্ড থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেন। তাঁরা তখন শিশুর অবস্থার কথা জানিয়ে শিশুটিকে ডিসচার্জ করিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরও কিছু সময় থাকার আবেদন জানান। কিন্তু এরপরই ওই নিরাপত্তারক্ষী তাঁদের জোর করে ওয়ার্ড থেকে বার করে দিতে থাকেন। তাতে বাধা দিলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি।
পীযূষবাবু জানিয়েছেন, এই সময় তাঁকে মারতে মারতে শিশুওয়ার্ডের ডাক্তারের চেম্বারের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। বাধা দিতে গেলে তার দাদা সমীর দেবনাথ এবং বৌদি বর্ণশ্রী দেবনাথকেও মারধোর করা হয়। এরপরই আরও কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষীকে ডেকে নিয়ে এসে প্রায় জনা চারেক মিলে তাকে কুকুর পেটানো করে মাটিতে ফেল বেধড়ক মারধোর করে। এরপর থেকেই তিনি কানে কম শুনতে শুরু করেছেন। এমনকি পীযূষবাবু অভিযোগ করেছেন, এই ঘটনার পর তিনি হাসপাতালেই তাঁর চিকিৎসা করাতে গেলে তাও করা হয়নি। অথচ এই হাসপাতাল থেকেই তিনি পাশ করেছেন এমনকি বর্তমানে তিনি কর্মরতও। তিনি জানিয়েছেন, এব্যাপারে এদিনই বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে গোটা ঘটনার তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, এই ঘটনা সম্পর্কে হাসপাতালের শিশু বিভাগের নিরাপত্তারক্ষীরা জানিয়েছেন, কাউকেই মারধর করা হয়নি। কেবলমাত্র হাসপাতালের নিয়ম মেনে ওই রোগীপক্ষকে ওয়ার্ড থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেছিলেন। পীযূষবাবুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তারক্ষীরা জানিয়েছেন, উনি নিজেকে ডাক্তার বলায় তাঁকে হাসপাতালের নিয়ম জানিয়ে দিয়ে ওয়ার্ড থেকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু না যাওয়ায় হাসপাতালের ক্যাম্পের পুলিশ ডেকে তাদের বার করে দেওয়া হয়। পাল্টা তিনিও জানিয়েছেন, এব্যাপারে তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এব্যাপারে বর্ধমান হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডা. অমিতাভ সাহা জানিয়েছেন, এই ধরণের ঘটনার কথা তিনি শুনেছেন। এব্যাপারে ডা. পীযূষ মজুমদারের কাছ থেকে তাঁরা লিখিত অভিযোগ চেয়েছেন। একইসঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের কাছ থেকেও লিখিত বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতাল পরিষেবা যাতে কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয় বা সকলেই যাতে ভাল ব্যবহার পান তা নিশ্চিত করতে এব্যাপারে যা যা করণীয় তা তাঁরা করবেন।