বীরভূমের মাধ্যমিক ছাত্র অরিজিত দাসের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত অ্যাম্বুলেন্সের দুষ্ট চক্র ভাঙতে এবার অত্যন্ত গোপনে জেলা প্রশাসন কাজ শুরু করে দিল। স্বাস্থ্য দপ্তর, জেলা প্রশাসনের আধিকারিক এবং পুলিশকে নিয়ে একটি কমিটি প্রতিনিয়তই এব্যাপারে নজরদারি করার কাজ শুরু করে দিল। বিশেষত বহিরাগত রোগীদের ক্ষেত্রে এই নজরদারিকে কঠোর করার কাজে হাত দিল জেলা প্রশাসন।
বীরভূমের ছাত্র অরিজিত দাসের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতারণায় জড়িত অ্যাম্বুলেন্স চালক এবং মালিকদের কড়া দাওয়াই দেওয়ার জন্যও তৈরি জেলা প্রশাসন। যেভাবে অ্যাম্বুলেন্স চালক ও মালিকরা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার কাজ করছেন তা নিয়ে এবার সরাসরি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণও করতে চলেছে জেলা প্রশাসন।
পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্স চালক ও মালিকদের সঙ্গে নার্সিংহোমের গোপন আঁতাতের বিষয়টি সম্পর্কে আগেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু যে ঘটনা সামনে এসেছে তাতে তাঁরা খুব শীঘ্রই অ্যাম্বুলেন্সের মালিক ও চালকদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন। রোগীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ করার জন্যও তাঁরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চলেছেন।
এদিকে, বিভিন্ন সাংসদ ও বিধায়ক কোটায় যে সমস্ত অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করা হয়েছে শেষ ১০ বছরের তার হিসাব খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। পূর্ব বর্ধমান জেলায় এই ধরণের কতগুলি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে, সেগুলি কিভাবে রয়েছে, সেগুলির আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রভৃতি সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। পাশাপাশি সমস্ত সরকারি হাসপাতালগুলিতে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী আনার জন্য টোকেন প্রথাকে একেবারে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, সম্প্রতি কালনা ও কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে এই টোকেন প্রথা চালু করা হয়েছে। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাবার সময় অ্যাম্বুলেন্স চালককে দেওয়া হচ্ছে টোকেন। সেই টোকেন অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগ আসতে শুরু করেছে, এক সরকারি হাসপাতাল থেকে অন্য সরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠানোর সময় তা হাইজ্যাক করা হচ্ছে। আর তাই তা বন্ধ করার জন্য এই টোকেন প্রথাকে একেবারে তৃণমূল স্তরে নিয়ে যাওয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যদি কোন ক্ষেত্রে একটি সরকারি হাসপাতাল থেকে ওই টোকেন দেওয়ার পর রোগীকে অন্য সরকারি হাসপাতালে নিয়ে না গিয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলেও তা জানা যাবে। কারণ অন্য সরকারি হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যাওয়া পর ওই টোকেনকে পরীক্ষার সময় যে হাসপাতাল থেকে তা ইস্যু করা হচ্ছে সেখানকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি যে হাসপাতাল থেকে রোগীকে পাঠানো হচ্ছে পাল্টা তাঁরাও অন্য হাসপাতালকে বা যেখানে পাঠানো হচ্ছে তাদের তা জানিয়ে দিচ্ছেন। এরফলে এই রোগী হাইজ্যাককে রোখা যাবে বলেই মনে করছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। জেলাশাসক জানিয়েছেন, এই টোকেন প্রথায় ভালরকম সফলতা মিলেছে জেলায়। কিন্তু বাইরের জেলা থেকে বর্ধমানে পাঠান রোগীর ক্ষেত্রে কিভাবে এই সমস্যা দূর করা যাবে তা নিয়ে তাঁরা চিন্তাভাবনা করছেন। সেক্ষেত্রে অন্য জেলাও এই টোকেন চালু করতে পারে কিনা তা নিয়েও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।