ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া এক প্রসূতির ঝুঁকিপূর্ণ বিরল অস্ত্রোপচারে সাফল্য পেলেন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বর্তমানে সেই মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ রয়েছে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডা. উৎপল দাঁ জানিয়েছেন,গত ২৮ জুন বীরভূমের বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে ঝুমা সরকার (২৪) নামে এক প্রসূতিকে পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঝুমাদেবীর শ্বশুরবাড়ি বাঁকুড়ার বড়জোড়া এলাকায়। বাপের বাড়ি বোলপুর থানা এলাকায়। গত ৫ জুলাই তাঁর সম্ভাব্য প্রসবের দিন ছিল।
ডা. দাঁ আরও জানিয়েছেন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিত বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গেছেন। কোনোরকম শারীরিক অসুবিধাও তাঁর ছিল না। কিন্তু হঠাৎই গত ২৭ জুন তাঁর ডান হাত ও পা অসার হয়ে পড়ে। তিনি পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এরপরেই তাঁকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পরের দিন তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সুপার জানিয়েছেন, রোগীকে বর্ধমানে নিয়ে আসার পর ডা.অতীন হালদারের নেতৃত্বে ঝুমাদেবীর এমআরআই ও অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়। সেখানেই ধরা পড়ে তাঁর মস্তিষ্কের বামদিকে বেসাল গ্যাংগ্লিয়াতে রক্তক্ষরণের জন্য ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে।
ডা. উৎপল দাঁ জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি রোগী এবং বাচ্চা উভয়েরই জীবন সংশয়ের কারণ ছিল। এমতবস্থায় ডা. অতীন হালদারের নেতৃত্বে নিউরোলজি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শও করা হয়। তিনি জানিয়েছেন, এটি সাধারণত প্রসূতি মায়েদের অতিরিক্ত রক্ত সঞ্চালন জনিত কারণে হলেও এটা একটি ব্যতিক্রমী রোগ। এরফলে মা ও শিশু উভয়েই সংকটের মুখে পড়ে। এমতবস্থায় ঝুমাদেবীর সমস্ত রিপোর্ট এবং রোগ সম্পর্কে জানানো হয় ঝুমাদেবীর স্বামীকে। যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন জওয়ান। এদিকে, এই অবস্থার মধ্যে ৫ জুলাই ঝুমা দেবীর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। বাচ্চার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।
ডা. দাঁ জানিয়েছেন, ঝুমা দেবীর এই পরিস্থিতিতে তাঁরা মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সমস্ত ধরণের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা এবং সমস্ত রকম আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ডা. অতীন হালদারের নেতৃত্বে ওইদিন সন্ধ্যে ৭টা নাগাদ আইসিসিইউতে ঝুমাদেবীর সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপরই ডা. অতীন হালদারের নেতৃত্বে অ্যানাস্থেটিক বিভাগের ডাক্তার তীর্থাশীর মণ্ডল এবং সৌমেন মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে অতীনবাবু এবং ডা. হিমাদ্রী শেখর দাস ঝুমা দেবীর সিজার করেন। তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতাল সুপার ডা. উৎপল দাঁ জানিয়েছেন, বর্তমানে ঝুমাদেবীকে হাসপাতালের এইচডিইউ ওয়ার্ডে রাখা হলেও মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ রয়েছেন। আর এই ব্যতিক্রমী ঘটনার পর ডাক্তারদের পারদর্শীতায় নিজের কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়েই বৃহস্পতিবার ঝুমা দেবীর স্বামী ভারতীয় জওয়ান বাসুদেব সরকার রীতিমত সোচ্চারে বলে উঠলেন “ভারত মাতা কি জয়”। এরই সঙ্গে তিনি বর্ধমান হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রশংসাও করতে কসুর করলেন না।