জামালপুরে ডাইনি অপবাদ দিয়ে একটা পরিবারের ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠল এলাকার কিছু মানুষের ওপর। অত্যাচারের শিকার হওয়া দম্পতি জয়ন্তী মুদি এবং কার্তিক মুদি বেশ কয়েকদিন গৃহবন্দী থাকার পর বৃহস্পতিবার তাঁদের উদ্ধার করে ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। জামালপুরের গোপীকান্তপুরের বাসিন্দা অত্যাচারিত কার্তিক মুদি জানিয়েছেন, গত ২৬ মার্চ এলাকায় পুজো ছিল। সেখানে গ্রামের কয়েকজন মহিলার ‘ভর’ হয়। সেই ভর হওয়া মহিলারা জানান জয়ন্তী মুদি ডাইনি এবং ওদের বাড়িতে ভূত আছে। এরপরই গ্রামবাসীরা কার্তিক মুদির বাড়িতে চড়াও হন বলে তিনি জানিয়েছেন। কার্তিক মুদি জানিয়েছেন, তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রীকে মারধর করা হয়। এরপরই তাঁদের তুলে ত্রিবেণীতে এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার পর জয়ন্তীর চুল কেটে দেওয়া হয় এবং কার্তিককে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। এরপর বাড়িতে ফেরার দু-একদিন পরেই গ্রামে শান্তির জন্য তাঁদের কাছে চল্লিশ হাজার টাকা চাওয়া হয়। ওই টাকা দিয়ে ওঝা আনা হবে বলে জানান হয়। কার্তিক মুদিরা সেই টাকা দিতে না চাওয়ায় তাঁদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায় বলে অভিযোগ। কার্তিক মুদি জানিয়েছেন, তাঁদের লংকাগুঁড়ো, মুড়ি, কাঁচালংকা খাওয়ান হয়। তাঁদের স্থানীয় ক্লাবে তিনদিন আটকে রাখা হয়। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গৃহবন্দী করে রাখা হয় ওই দম্পতিকে। বৃহস্পতিবার ওই দম্পতি অভিযুক্তদের এড়িয়ে জামালপুর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। সেখান থেকে তাঁদের আত্মীয়স্বজন বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন। তাঁরা সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি জানান। এরপরই পুলিশ-প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। বিডিও অফিসের প্রতিনিধিরা ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। দম্পতির কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে তাঁদের সমস্ত সহযোহিতার আশ্বাস দেওয়া হয়। পরিবারের ওপর হওয়া সমস্ত ঘটনার কথা উল্লেখ করে ১১ জনের বিরুদ্ধে জয়ন্তী মুদি জামালপুর থানা, জেলাশাসক, মহকুমাশাসক এবং ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। বিডিও তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসেন। জামালপুরের ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক সুব্রত মল্লিক জানিয়েছেন, ওই দম্পতির কাছ থেকে যে অত্যাচারের কথা শুনেছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। চরম নিন্দনীয় ঘটনা। পুলিশকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এলাকায় সচেতনতা শিবির করা হবে। একজন পুলিশ কর্মীসহ কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার্সকে ওই পরিবারের নিরাপত্তার জন্য বাড়ির কাছে রাখা হবে বলে সুব্রতবাবু জানিয়েছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এইধরণের ঘটনা একদম বরদাস্ত করা হবে না। ইতিমধ্যেই পুলিশ-প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
Like Us On Facebook