মানসিকভাবে পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নিখিল নির্মলকে হেনস্থা করার ঘটনায় ইণ্ডিগো এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেবার নির্দেশ দিল বর্ধমানের ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। শুক্রবার বর্ধমানের ক্রেতা সুরক্ষা আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে। আদালত আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে এই আর্থিক ক্ষতিপূরণের অর্থ দেবার নির্দেশও দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৩ ডিসেম্বর ইণ্ডিগো এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিখিলবাবু। ওই মামলায় বিমানবন্দরের দুই ক্রু-র বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশনের কাছেও তিনি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের মাধ্যমে আপিল করেন। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে তাকে হয়রানি এবং হেনস্থা করার ঘটনায় ৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ডিজাষ্টার ম্যানেজমেণ্টের একটি কোর্স করতে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নিখিল নির্মল গতবছর ৫ থেকে ১২ ডিসেম্বর দিল্লি যান। ১০ ডিসেম্বর তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা ছিল। তাঁর সঙ্গে এই সফরে ছিলেন তাঁর স্ত্রীও। কিন্তু দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরের কিয়স্ক থেকে তিনি দুটি টিকিট কেটে বিমানে চড়তে গেলে বাধা দেন বিমানবন্দরের দুই গ্রাউণ্ড ক্রু। প্রথমে তাঁরা অতিরিক্ত জেলাশাসকের লাগেজে আপত্তিকর কিছু থাকার অভিযোগ তোলেন। এরপরে তাঁর লাগেজ থেকে মোবাইলের জন্য ব্যবহৃত পাওয়ার ব্যাংক পাওয়া গেলে সেটি নিয়ে বিমানে উঠতে তাকে বাধা দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ তাকে আটকে রাখা হয় এবং নির্দিষ্ট বিমানে তিনি কলকাতায় ফিরতেও পারেননি। এমনকি নিখিল নির্মল আদালতে জানিয়েছেন, বারবার তিনি তার পরিচয় এবং কাজের গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও তার সঙ্গে রীতিমত দুর্ব্যবহার করা হয়। তাকে প্রায় ১২ ঘণ্টা বিমান বন্দরে আটকেও রাখা হয়। এমনকি আইএএস অফিসার হিসাবে প্রায়শই তাকে দিল্লিতে এইভাবেই আসতে হয় বলেও তিনি জানান। সপ্তাহখানেক আগেও তিনি পাওয়ার ব্যাংক নিয়েই সফর করেন বলে জানান। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাকে আটকে রাখা হয়। যদিও এরপর তাকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে অন্য বিমানে যথারীতি সিআরপিএফ-এর সহযোগিতায় পাওয়ার ব্যাংক নিয়েই তিনি কলকাতায় ফেরেন। এরপরই বর্ধমান ফিরে অতিরিক্ত জেলাশাসক বিমান বন্দরে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার এই দুর্ব্যবহার এবং হয়রানি ও হেনস্থার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। যদিও এই মামলায় ওই বিমান সংস্থার কেউই হাজির হননি। ফলে শুক্রবার বর্ধমান ক্রেতা সুরক্ষা আদালত এই মামলায় রায় ঘোষণা করেন। আদালত ওই বিমান সংস্থাকে বিমানের টিকিট বাবদ ৬৯ হাজার ৪৫৮টাকা, দিল্লী এয়ারপোর্টে থাকা ও খাওয়া বাবদ ৬ হাজার টাকা এবং তাঁকে মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে হেনস্থা ও উৎকণ্ঠায় রাখার জন্য ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবার নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে এই ক্ষতিপূরণ দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দিল্লি বিমানবন্দরের দুই গ্রাউন্ড ক্রু’র বিরুদ্ধে ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশনকে প্রয়োজনীয় তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।