বর্ধমান স্টেশন চত্বরে বিজেপির এক সমর্থকের চায়ের স্টল বসানো এবং বর্ধমান স্টেশন এলাকার দখলকে কেন্দ্র করে বর্ধমান স্টেশন এলাকায় বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ও আতঙ্ক সৃষ্টি হল। বর্ধমান স্টেশন এলাকায় এদিন দুপুর থেকেই দুই রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষ, বোমাবাজির ঘটনায় চরম আতঙ্কের মুখে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

এদিন দুপুর থেকেই এলাকার দখলদারী নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল উভয়পক্ষই জমায়েত শুরু করে বর্ধমান স্টেশন এলাকায়। একদিকে বিজেপি নেতা খোকন সেন অন্যদিকে আইএটিটিইউসির জেলা সভাপতি ইফতিকার আহমেদ ওরফে পাপ্পুর নেতৃত্বে তৃণমূল সমর্থকরাও সশস্ত্র অবস্থায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামলাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী হাজির হয় স্টেশন এলাকায়। উত্তেজনা কমাতে এদিন দুপক্ষকেই বর্ধমান স্টেশনের সামনে থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। আর এর কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় স্টেশন লাগোয়া গুডশেড রোডে ব্যাপক বোমাবাজি। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ব‌্যাপক লাঠিচার্জ করে। আটক করা হয় বিজেপি নেতা খোকন সেন সহ বেশ কিছু বিজেপি সমর্থককে।

উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি স্টেশন এলাকায় বিভিন্ন বাজার সহ গাড়ির স্ট্যান্ডে তাদের ইউনিয়ন খুলেছে। এমনকি সম্প্রতি স্টেশন এলাকায় তৃণমূলের দলীয় সভায় স্টেশন এলাকা সহ সর্বত্র তৃণমূলের ইউনিয়নই থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়। এদিকে, সোমবার গুডশেড রোডে বিজেপির সভায় পাল্টা ইউনিয়ন গঠন সহ স্টেশন এলাকায় তারাও থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়। বিজেপির ওই সভা থেকেই অভিযোগ তোলা হয়, বর্ধমান স্টেশন চত্বরে টোটো স্ট্যাণ্ড থেকে প্রতিটি টোটোর কাছ থেকে সারাদিনে ২০ টাকা করা তোলাবাজি করছে তৃণমূল। অবিলম্বে তা বন্ধ করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। শুধু টোটো স্ট্যাণ্ডই নয়, একইসঙ্গে বর্ধমান স্টেশন বাজারেও রীতিমত তোলাবাজির অভিযোগ তোলে বিজেপি।

এদিন বিজেপি নেতা খোকন সেন জানিয়েছেন, এদিন সকালে স্টেশন চত্বরে তাঁদের দলীয় একটি অফিস ভাঙচুর করে তৃণমূল সমর্থকরা। পাশাপাশি তাঁদের কয়েকজন কর্মীকে মারধরও করা হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ বিজেপি সমর্থকরা এককাট্টা হয়ে প্রতিরোধের রাস্তায় নামেন। অন্যদিকে, বিজেপির আনা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি ইফতিকার আহমেদ জানিয়েছেন, রেলের নিয়ম মেনেই টোটো স্ট্যাণ্ড করা হয়েছে। রেলের নিয়ম অনুসারে ৩৪ টাকা করে প্রতিটি গাড়ি থেকে আদায় করার নিয়ম থাকলেও তাঁরা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সেটা কমিয়ে ২০ টাকা করেছেন। এটা কোনোভাবেই অবৈধ নয়। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি পায়ে পা লাগিয়ে ঝামেলা ও অশান্তির সৃষ্টি করছে। জোর করে স্টেশন এলাকা দখল নেবার চেষ্টা করছে। এদিনও সশস্ত্র অবস্থায় এসে তাঁরা ঝামেলা সৃষ্টি করে।

এদিকে, বর্ধমান স্টেশন থেকে দুটি রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেবার পর গুডশেড রোডে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজির ঘটনায় পুলিশের লাঠিচার্জ এবং বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু হয়। এই সময়ই একটি বাড়ি থেকে রীতিমত মারতে মারতে পুলিশ আটক করে বিজেপি নেতা খোকন সেনকে। এছাড়াও মহিলা সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি সমর্থককে পুলিশ আটক করে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিজেপি সমর্থকরা তাঁদের বেশ কয়েকজন সমর্থকের দোকান ও বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। পাল্টা বিজেপিও তৃণমূলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছে।



Like Us On Facebook