পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার আকবরনগরের বাসিন্দা ইশান মণ্ডলের মৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে শুরু হওয়া বর্ধমান হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি রীতিমত স্বাস্থ্যদপ্তরের কড়া পদক্ষেপে উঠে গেল শুক্রবার সাড়ে ৪টে নাগাদ। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে জুনিয়র ডাক্তাররা মূলত তাঁদের নিরাপত্তা এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে থেকেই হাসপাতালের রোগী মহলে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে রোগীদের নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যেতে শুরু করেন রোগীপক্ষের লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যে থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় বৈঠকে বসেন। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, সিনিয়র ডাক্তার এবং হাউস স্টাফদের দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করা হয়।

স্বাভাবিকভাবেই জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির সময় যত বাড়তে থাকে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা ততই জটিল হতে শুরু করে। ইতিমধ্যে হাসপাতালের সুপার জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে বসার আবেদন জানান। কিন্তু লিখিতভাবে সুপারের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি দেবার দাবি জানাতে থাকেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এভাবেই শুক্রবার সকালেও লাগাতার কর্মবিরতি চলতে থাকায় হাসপাতাল সুপার ডা. উৎপল দাঁ, ডেপুটি সুপার ডা. অমিতাভ সাহা, বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (স্বাস্থ্য) রত্নেশ্বর রায়, হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য সুশান্ত প্রামাণিক, পুরসভার কাউন্সিলর খোকন দাস, সাহাবুদ্দিন খান প্রমুখরা জরুরী বৈঠকে বসেন। বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি সম্পূর্ণভাবে মেনে নিয়ে তাঁদের লিখিতভাবে জানিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু সেই লিখিত প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরেও জুনিয়র ডাক্তাররা ফের আরও কয়েকটি দাবি পেশ করেন। তা নিয়ে ফের শুরু হয় আলোচনা। ইতিমধ্যে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ঘনঘন রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ চলতে থাকে। পাশাপাশি হাসপাতালের পরিষেবা ঠিক রাখতে পানাগড় সেনা ছাউনি থেকে চিকিৎসকদের নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেবার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এরপরই বিকাল ৪টে ২০ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তারা সরাসরি হাসপাতাল সুপারকে নির্দেশ দেন, ১০ মিনিটের মধ্যে জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ না দিলে যারা কর্মবিরতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে, এই পরিস্থিতির মাঝেই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীর আত্মীয়রা এসে সুপার অফিসের সামনে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ জানাতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের অভিযোগ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে, জুনিয়র ডাক্তারদের এই মনোভাবের ঘটনায় কার্যত এদিন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জুনিয়র ডাক্তাররা দ্বিতীয় দফায় ফের দাবি পেশ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে এদিন বৈঠক থেকে বেড়িয়ে আসেন কাউন্সিলার খোকন দাস। অন্যদিকে, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কড়া নির্দেশ আসার পরই তা জানিয়ে দেওয়া হয় জুনিয়র ডাক্তারদের। কার্যত বেগতিক দেখেই বিকাল প্রায় সাড়ে ৪টে নাগাদ জনা তিনেক জুনিয়র ডাক্তার সুপারের কাছে লিখিতভাবে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করে চিঠি দেন। হাসপাতাল সুপার জানিয়েছেন, বিকাল সাড়ে ৪টের পর থেকে জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ দেওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তিনি জানান, নিরাপত্তা বাড়াতে সিসিটিভি সহ হাসপাতালে সিভিক পুলিশ ও পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Like Us On Facebook