আর্থিক লগ্নিকারী একটি সংস্থার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে বর্ধমান পুরসভার প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করল সিবিআই। বৃহস্পতিবারই নিঃশব্দে সিবিআইয়ের দুটি টিম বর্ধমানে আসে। প্রণববাবুর বাড়ি তেলমারুই রোডে তাঁরা হানা দেন। প্রণববাবুকে গ্রেফতার করে সিবিআইয়ের টিম। সূত্রের খবর, গ্রেফতার করার পরই দ্রুততার সঙ্গে তাঁকে আসানসোলে নিয়ে যাওয়া হয়। আসানসোল সিবিআই কোর্টে শুক্রবার তাঁকে পেশ করে তদন্তের স্বার্থে তাঁকে ৪ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানালে বিচারক ৪ দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন।
এদিকে, শুক্রবার সকাল থেকেই সিবিআইয়ের একটি টিম প্রণববাবুর নিজস্ব অফিস জিটি রোডে বীরহাটার ‘টক অফ দি টাউন’ বিল্ডিংয়ে হানা দেয়। এরই পাশাপাশি ৫ জনের অপর একটি টিম এদিন বর্ধমান শহরের অন্যান্যা জায়গাতেও খোঁজখবর চালাতে থাকেন। সূত্রের খবর, এদিন সিবিআইয়ের এই টিমের সঙ্গে ছিলেন ব্যাঙ্কের কয়েকজন প্রতিনিধিও। প্রণববাবুর অফিসে এদিন সিবিআইয়ের টিম তাঁর সমস্ত ফাইলপত্র পরীক্ষা করেন। কিছু কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে, সিবিআইয়ের হাতে প্রণববাবুর এই গ্রেফতারির খবর রটে যেতেই গোটা বর্ধমান শহর জুড়ে শুরু হয়ে তীব্র আলোড়ন।
প্রণববাবুর স্ত্রী রেখা চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে জনা পাঁচেকের একটি দল তাঁর বাড়িতে আসেন। তাঁরা বার্ডওয়ান সন্মার্গ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চান। রেখাদেবী জানিয়েছেন, যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা সিবিআইয়ের অফিসার বলে পরিচয়পত্র তাঁকে দেখিয়েছেন। উল্লেখ্য, প্রণববাবুর এই বিল্ডিংয়ে আর্থিক লগ্নীকারী সংস্থা বর্ধমান সন্মার্গ অফিস খোলে। রেখাদেবীর দাবি, ভাড়ার বিনিময়ে তারা অফিস খুলেছিল। কিন্তু রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সেখান থেকে অফিস সরিয়ে নিয়ে চলে যায়।
এদিকে, প্রণববাবুর এই গ্রেফতারির বিষয়ে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল প্রামাণিক জানিয়েছেন, এর মধ্যে তাঁরা একটি চক্রান্ত দেখতে পাচ্ছেন। গোটাটাই বিজেপির চক্রান্ত বলে তাঁরা মনে করছেন। অপরদিকে, সূত্রের খবর, প্রণববাবুর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের এই তদন্তে একাধিকবার তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। কয়েকবার তিনি সিবিআই দফতরে হাজিরা দিলেও সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ডাক তিনি উপেক্ষা করেন বলে অভিযোগ। আর তারপরেই বৃহস্পতিবার তাঁকে সরাসরি গ্রেফতার করে সিবিআই। অশান্তি এড়াতে তাঁকে গ্রেফতারের পরই আসানসোল নিয়ে চলে যাওয়া হয়।
অপরদিকে, আর্থিক তছরূপের মামলায় বর্ধমান পুরসভার প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করায় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলাড়ন সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্ধমান পুরসভার নির্বাচিত পুরবোর্ড না থাকা অবস্থায় কয়েক বছর চলার পর রাজ্য সরকার কয়েকমাস আগে পুরসভার প্রাক্তন দুঁদে কাউন্সিলার, আইনজীবী প্রণব চট্টোপাধ্যায় ওরফে খুদুকে প্রশাসক হিসাবে নিযুক্ত করে। একদা পুরসভার বিরোধী দলনেতা প্রণববাবুকে প্রশাসক হিসাবে নিযুক্ত করার পরই পুরসভার কাজে গতি আনার চেষ্টা করেন তিনি। একইসঙ্গে পুরসভার কয়েকটি অনিয়মের বিষয় নিয়ে তিনি মুখ খোলায় তৃণমূলের অন্দরেই শুরু হয় ব্যাপক চাপান উতোর। এই অবস্থার মাঝেই প্রণববাবুকে আর্থিক নয়ছয়ের মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে শহর জুড়ে। সামনেই পুরভোট। তার আগে প্রণববাবুর গ্রেফতার নিয়ে রীতিমত সরগরম হয়ে উঠল বর্ধমান।