২০১৮ সালে শরীরে বাসা বাঁধে মারণরোগ ক্যানসার। তারপর নানান শারীরিক জটিলতা নিয়ে দীর্ঘ লড়াই। ক্যানসার নিয়েই ফের ছ’বছর পর নতুন লড়াইয়ে ভাতারের হাসনা বানু। ভবিষ্যতে সিআইডি অফিসার হওয়ার লক্ষ্যে দুর্বার লড়াইয়ে সামিল। বাবা সেখ মনোয়ার জানান, হাসনা বানু ৯ বছরে পা দেওয়ার পরই শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রথমে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। জানা যায়, তার রক্তে হিমগ্লোবিন দ্রুত কমছে। সেখান থেকে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, শরীরে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে। দেরী না করে ধারদেনা করে মেয়েকে নিয়ে ছুটলাম মুম্বইয়ে বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে। তারপর থেকেই তার চিকিৎসা চলছে।

তারপর থেকে ঠিক ছ’বছর পর বাবার সঙ্গে টোটো করে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে হাসনা বানু। স্কুলে ঢোকার মুখেই দিদিমণিরা জড়িয়ে বলছেন, ‘তোমার স্বপ্ন পূরণ হোক, এটাই আমরা চাইছি।’ বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও ভূগোল পরীক্ষা দেওয়া হয়ে গিয়েছে হাসনার। ইতিহাস পরীক্ষার সময় পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তাকে পরীক্ষার হল ত্যাগ করতে হয়।

হাসনা বানুর স্বাভাবিক চলাফেরার শক্তি ছিল না। এর পরেও টানা কয়েক বছর চিকিৎসার জন্য বারেবারে মুম্বই যেতে হয়েছে। কেমোথেরাপি চলেছে। কিন্তু পড়াশোনা থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়নি। কেমোথেরাপি চলাকালীনই ভাতারের বলগোনার স্কুলে এসে পরীক্ষা দিয়েছে। মাঝেমধ্যে স্কুলও গিয়েছে হাসনা। হাসনার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিতালি মৈত্র বলেন, ‘আমরা সব সময় ওই ছাত্রীর পাশে ছিলাম। অসুস্থতার জন্য পড়ায় কোনও প্রভাব না পড়ে সে ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলাম। সবার সহযোগিতায় হাসনা মাধ্যমিক দিচ্ছে।’

হাসনার বাবা শেখ মানোয়ার কলকাতার একটি বস্ত্র বিপণীর কর্মী। মেয়ের মাধ্যমিকের জন্যে দু’সপ্তাহ ছুটি নিয়ে বাড়িতেই রয়েছেন। তিনিই টোটো করে সকাল বেলা বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে এরুয়ারের স্কুলে নিয়ে যান। স্কুলের সামনে বসে থেকে পরীক্ষার শেষে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, ‘ক্যানসারকে জয় করে মেয়ে পড়ায় ফিরেছিল। কিন্তু ক্যানসারের ওষুধ ও কেমোথেরাপির জন্যে স্নায়ু রোগে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। ফের মুম্বই নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।’

স্কুল ও পরিজনদের দাবি, স্নায়ু রোগে আক্রান্ত হওয়ায় টানা এক ঘন্টা পড়ার মতো ক্ষমতা থাকে না হাসনার। মাথা ঘোরা, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া এমন কী পড়তে পড়তে দেখতে না পাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। তখন হাসনাকে বেশি ডোজ়ের ওষুধ দিতে হয়। মানোয়ার বলেন, ‘চাপ পড়লেই অসুস্থ হয়ে পড়ে হাসনা। মুম্বইয়ের ডাক্তারদের পরামর্শ মতো ওষুধ দিতে হয়।’

বর্ধমান মেডিক্যালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ রজত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌরভ সাউরা মেয়েটির মনের জোরের প্রশংসা করেছেন। তাঁদের দাবি, ‘ক্যানসার মানেই সব শেষ, এই ধারণাটা থেকে বেরনোর সময় এসেছে।’ রজতবাবু বলেন, ‘যদি চিকিৎসা সঠিক সময়ে শুরু হয় এবং পুরো মেয়াদ শেষ করা হয়, তবে একাধিক ক্যানসারের ক্ষেত্রে ভাল ফল মিলছে। এ ক্ষেত্রে মনের জোরটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে ক্যানসারের নানা ওষুধ ও কেমোথেরাপির জন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ মঙ্গলবার ভূগোল পরীক্ষা দেওয়ার পরে হাসনা বলে, ‘যত কষ্টই হোক আমাকে পড়তেই হবে। আমি সিআইডি অফিসার হতে চাই।’

Like Us On Facebook