বর্ধমানের মিষ্টি হাব খোলা নিয়ে ফের বড়সড় ধাক্কার মুখে পড়ল জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন মিষ্টিহাবের ২৫টি দোকানের মালিকদের গত ৬ মে বৈঠকে ১৫দিনের মধ্যে সমস্ত দোকানকে চালু করার নির্দেশ দিলেও, বৃহস্পতিবার প্রায় সিংহভাগ দোকানদারই জানিয়ে দিলেন তাঁদের পক্ষে উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়া মিষ্টি হাবে দোকান খোলা সম্ভব নয়। এদিন প্রায় ১৫টি দোকানের মালিক বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমাশাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস সহ জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলার সঙ্গে দেখা করে তাঁদের এই অপারগতা লিখিতভাবে জানিয়ে দিলেন। আর এরপরই ফের নতুন করে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প মিষ্টি হাব খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হল।

২ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর বর্ধমানের বাম এলাকায় গড়ে ওঠা মিষ্টি হাবে মোট ২৫ টি দোকান আছে। যার মধ্যে ১৫ টি দোকানের মালিক বৃহস্পতিবার লিখিতভাবে জানিয়ে দিলেন বারবার ক্ষতি স্বীকার করে তাঁদের পক্ষে দোকান খোলা সম্ভব নয়। তাঁরা জানিয়েছেন, পূর্বেও একাধিকবার দোকান খুলে অবস্থানগত কারণে ক্রেতার অভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তাঁরা। তাই মিষ্টি হাব বাঁচাতে জেলাপ্রশাসনকে তাঁদের পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাবগুলিকে কার্যকর না করে ফের দোকান খুললে ব্যবসায়িক ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ হবে না বলেই দাবি ব্যবসায়ীদের।

উল্লেখ্য, ২৭ এপ্রিল নবান্ন থেকে ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প বর্ধমানের মিষ্টি হাব খোলার তোড়জোড় শুরু করে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। বারবার মিষ্টি হাবকে চালু করা এবং কিছুদিন পরই তা ফের ক্রেতার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া আটকাতে ৬ মে ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে জেলাপ্রশাসন। নেওয়া হয় একাধিক ব্যবস্থাও। এদিন ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেহেতু মিহিদানা ও সীতাভোগ জি আই রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে। পাশাপাশি ল্যাংচার জন্য আবেদনও করা হয়েছে তাই মিহিদানা, সীতাভোগ ও ল্যাংচাকে কেন্দ্র করে গবেষণা কেন্দ্র, উন্নতমানের কিচেন, এক্সপোর্ট করার মতো পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। যদি তা না করা যায় তাহলে শত চেষ্টাতেও মিষ্টি হাব ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

বর্ধমান মিহিদানা সীতাভোগ ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রমোদ সিং জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের দেওয়া ডেটলাইন অনুযায়ী আগামী ২২ মে তাঁরা দোকান খুলতে পারবেন না। তাঁরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেই প্রস্তাব মেনে নিলে তাঁরা রাজি আছেন। তিনি জানিয়েছেন, বারবার ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই যেভাবে তাঁদের দোকান চালাতে বলা হয়েছে তা সম্ভবপর নয়। তাঁদের প্রস্তাব অনুযায়ী, মিষ্টান্ন গবেষণা কেন্দ্র, গুণমান যাচাইয়ের ল্যাব, জিআই পাওয়া মিহিদানা সীতাভোগকে কাজে লাগিয়ে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও হাইজিনিক কিচেন তৈরি করা হয় তাহলেই তাঁরা ভাববেন। এরই পাশাপাশি তাঁরা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিষ্টি হাবে সরকারি বাস দাঁড় করানোর যে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে তাও সম্ভব হবে না, কারণ মিষ্টি হাবের আগেই শক্তিগড়ে মিষ্টির ব্যবসা আছে। কেবলমাত্র মিষ্টি হাবে বাস দাঁড়ালে শক্তিগড়ের ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন। এদিকে, এদিন বর্ধমান উত্তর মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস জানিয়েছেন, কয়েকজন দোকানদার বিগতদিনে অভিজ্ঞতা থেকে তাঁদের অসুবিধার কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টা তিনি জানাবেন। মিষ্টি হাব খোলার ক্ষেত্রে সমস্ত রকমের সহযোগিতা জেলাপ্রশাসন করবে।

Like Us On Facebook