ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে দুই ভাই-বোনকে খুন করার ঘটনা ঘটল বর্ধমানের মাধবডিহি থানার আড়ুই গ্রাম পঞ্চায়েতের নেয়ড় গ্রামের দিঘীরপাড় আদিবাসী পাড়ায়। নিহতদের নাম মঙ্গলা মাণ্ডি (৬০) এবং বাঁকু ওরফে মাকু বাস্কে (৬৫)। খুন করার পর দামোদরের চড়ে নিয়ে গিয়ে মৃতদেহ পুড়িয়েও দিলেন আদিবাসী সমাজ। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
মৃতদের ভাইপো গুরুপদ মাণ্ডি জানিয়েছেন, প্রায় ৬ মাস ধরে গ্রামের এক মহিলা অসুস্থ ছিলেন। কিছুতেই তাঁর রোগ না সারায় গ্রামের আদিবাসী সমাজ দায়ী করেন ভাই-বোন মঙ্গলা মাণ্ডি এবং মাকু বাস্কেকে। এরপর প্রথমে গত শনিবার তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় জামালপুরের এক গুণীনের কাছে। গত ৩দিন ধরেই তাদের দুই ভাই-বোনকে জামালপুরের ওই ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। যথারীতি সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দুটি ট্র্যাক্টরে চেপে গ্রামের মানুষ মঙ্গলা ও মাকুকে নিয়ে যান জামালপুরে।
মৃত মাকু বাস্কের ছেলে শিবু বাস্কে জানিয়েছেন, সোমবারই ওই গুণীন নিদান দেন মঙ্গলা ও মাকুকে না মেরে ফেললে গ্রামের অসুস্থ মহিলা রেখা মাণ্ডিকে সারানো যাবে না। দীর্ঘদিন ধরেই রেখা মাণ্ডি অজানা রোগে ভুগছেন। শিবু বাস্কে জানিয়েছেন, এরপরই সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ গ্রামবাসীরা ট্র্যাক্টরে চেপেই ফিরে আসেন গ্রামে। এরপর ট্র্যাক্টর থেকে দুই ভাই-বোনকে নামানোর পর সকলের সামনেই তাদের পিটিয়ে মারা হয়। আধমরা অবস্থায় উভয়ের মুখে ঢেলে দেওয়া হয় কীটনাশক। মারা যাবার পর দ্রুততার সঙ্গে মৃতদেহ দুটি দামোদরের চড়ে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়েও দেওয়া হয়।
এদিকে, রাতেই এই ঘটনার খবর পেয়ে রায়না -২ এর বিডিও দিপ্যমান মজুমদার গ্রামে গেলে তাঁকে ধারালো অস্ত্র সহ তীর ধনুক নিয়ে তাড়া করা হয়। কার্যত প্রাণ বাঁচাতে বিডিও পালিয়ে আসেন। এরপর তিনি রায়না থানায় খবর দেন। কিন্তু রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিশাল পুলিশ বাহিনী ওই গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। গ্রামবাসীরা গোটা গ্রাম ঘিরে রাখে। পরে বর্ধমান থেকে আরও পুলিশ বাহিনী নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় আড়ুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পীযূষ কান্তি দাঁ জানিয়েছেন, রাতেই এই ঘটনার খবর পেয়ে তাঁরা গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের প্রবল বাধায় তাঁরা ফিরে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, ওই আদিবাসী পাড়ায় প্রায় ৭০টি আদিবাসী পরিবারের বসবাস রয়েছে। এই ধরণের ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি।
অপরদিকে, এই ঘটনা সম্পর্কে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির জেলা সম্পাদক অনাবিল সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এই ধরণের বর্বরোচিত ও পৈশাচিক ঘটনাকে কখনই মেনে নেওয়া যায় না। কোনো ব্যক্তির রোগ হলে তাঁর সঠিক চিকিৎসা হওয়া দরকার। তিনি জানিয়েছেন, অনেক সময়ই সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেই ডাইন অপবাদ দিয়ে ঘরছাড়া বা পিটিয়ে মারার মত ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের উচিত সঠিক কারণ খুঁজে বার করা এবং একইসঙ্গে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই ধরণের ঘটনা ঘটানোর সাহস না পান।