১লা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষে মিষ্টির দোকানগুলিতে ব্যস্ততার চিহ্ন নেই। অন্যান্য বছর নববর্ষের প্রায় ৭দিন আগে থেকে যখন দোকানে দোকানে চুড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়, সেখানে ১লা বৈশাখের দিন তিনেক আগেও বর্ধমানের নামী মিষ্টির দোকানদাররা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। এখনও পর্যন্ত গড়ে অধিকাংশ মিষ্টির দোকানেই ৬০ শতাংশ অর্ডারও ঢোকেনি। বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ সম্পাদক সৌমেন দাস জানিয়েছেন, বর্ধমান শহরের তুলনামূলক বড় মিষ্টির দোকানগুলিতে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার লাড্ডুর অর্ডার থাকে অন্যান্য বছর। এবছর অর্ধেক অর্ডারও আসেনি। তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি বর্ধমানের সীতাভোগ, মিহিদানা বাইরে পাঠানো হচ্ছিল। কিন্তু করোনার জন্য তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখনও তা চালু হয়নি। ফলে বর্ধমানের সীতাভোগ, মিহিদানার বাজারও এবার অত্যন্ত খারাপ।
সৌমেনবাবু জানিয়েছেন, একদিকে, তীব্র গরম, অন্যদিকে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জেরে মিষ্টি তৈরির ছানা ছাড়া সমস্ত কাঁচামালেরই দাম বেড়েছে। কিন্তু বাজারের যা অবস্থা তাতে মিষ্টির দাম বাড়ালে খদ্দেররা কিনতে পারবেন না। ফলে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা উভয় সংকটে পড়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ছানার দাম এখনও বাড়েনি। শুধু তাইই নয়, বর্তমানে ছানার যোগান ভাল থাকা সত্ত্বেও বাজারের পরিস্থিতির জন্য তাঁরা পর্যাপ্ত ছানা কিনতেই পারছেন না। ফলে ছানা ব্যবসায়ীরাও সমস্যায় পড়েছেন। সৌমেনবাবু জানিয়েছেন, বর্ধমান শহর কেন্দ্রিক যে সমস্ত বড় মিষ্টির দোকান রয়েছে মূলত তাঁরাই বর্ধমান শহর ছাড়াও আশপাশের অন্যান্য দোকানগুলিতে নববর্ষের মিষ্টি সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু এবারের অগ্নিমূল্য বাজারের পরিস্থিতি দেখে বহু দোকানদারই নববর্ষের অনুষ্ঠানকে একেবারে ছোট করে পালন করতে চাইছেন। ফলে তাঁদের দিক থেকে মিষ্টির অর্ডার তেমনভাবে এখনও আসেনি।
বর্ধমানের মিষ্টির কারিগর বিল্টু ঘোষ জানিয়েছেন, নববর্ষ মানেই তাঁদের একটা উপরি আয়ের রাস্তা তৈরি হত। নববর্ষের প্রায় ১৫দিন আগে থেকেই তাঁদের কাজের চাপ বাড়ত। নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত সময় কাজ করার জন্য তাঁদের উপরি আয় হত। কিন্তু এবছর আর সে সবের বালাই নেই। নববর্ষের মিষ্টি তৈরি করতে যখন সারাদিনে ২-৩ ঘণ্টাও তাদের বিশ্রাম জুটত না, এবারে তাঁদের কোন ব্যস্ততা নেই। বাজার খারাপ, সাধারণ খরিদ্দারের সংখ্যাই কমে গেছে। আদপেই নববর্ষের বাজার কি হবে তা নিয়ে তাঁরাও চিন্তিত।