শুক্রবার দুপুরে কলকাতার গার্ডেনরিচ হয়ে কফিন বন্দি সিআইএসএফের হেড কনষ্টেবল দীনঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের (৫২) মৃতদেহ বর্ধমান শহরের ৩নং ইছলাবাদের ঘোষপাড়ার মুখার্জ্জী বাড়িতে এল যখন তখন গোটা এলাকা থিকথিকে অথচ শান্ত মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। এয়ারকণ্ডিশন গাড়ি থেকে কফিনবন্দী দেহ বের করে নিয়ে যাওয়া হল বাড়িতে। সিআইএসএফের জওয়ানরা কফিনের ঢাকা খুললেন। কান্নায় ভেঙে পড়লেন দীনঙ্করবাবুর স্ত্রী মিতা মুখোপাধ্যায়, ছেলে দেবজিত মুখোপাধ্যায় সহ আত্মীয় স্বজনরা।

তাঁদের রতনকে (দীনঙ্করবাবুর ডাক নাম) শেষবারের মত দেখতে বাড়ির বাইরে অপেক্ষমান কাতারে কাতারে মানুষ। কিন্তু সিআইএসএফের জওয়ানদের নিষেধে তাঁরা বাড়িতে ঢুকতে পারলেন না। বাড়িতে কফিন খুলে শেষ বারের মত মৃত জওয়ানের মুখের একাংশ দেখানো হল। কারণ মাওবাদীদের আইইডি বিস্ফোরণে তাঁর দেহের উপর অংশই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। স্ত্রী মিতা মুখোপাধ্যায় মৃতদেহকে ঢেকে দিলেন হরিনাম লেখা নামাবলী দিয়ে। দেওয়া হল ফুলের মালা। শেষবারের মত স্বামীর পায়ে সিঁদুর ছুঁয়ে দিলেন। প্রিয় রতনকে হারিয়ে বাড়ির এক প্রবীণা জ্ঞানও হারালেন।

পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এবার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হল স্থানীয় ইয়ুথ ক্লাবের মাঠে। কাতারে কাতারে মানুষ। একে একে মৃতদেহে মালা দিলেন সিআইএসএফের অ্যাসিস্ট্যাণ্ট কমাণ্ডাণ্ট একে ঝা, সিনিয়র কমাণ্ডাণ্ট শারদ রায়, বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম নিয়োগী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু, জেলা পরিষদের সদস্যা গার্গী নাহা, প্রাক্তন কাউন্সিলার খোকন দাস, পরেশ সরকার প্রমুখরাও। এখানেও মৃতদেহে মালা দিতে গিয়ে রীতিমত চোখের জলে ভাসলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। কারণ তাঁর দাদাও সেনাবাহিনীতে দার্জিলিং-এ কর্মরত রয়েছেন। চোখের সামনে একজন জওয়ানের এই অকাল প্রয়াণে তাঁর বুকও কেঁপে উঠেছে এদিন। এখানে শেষবারের মত স্বামীকে বিদায় জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্ত্রী মিতা দেবী, ছেলে দেবজিত।

ইছলাবাদ ইয়ুথ ক্লাবের মাঠে সিআইএসএফের পক্ষ থেকে মৃত জওয়ানকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। এরপর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমানের নির্মল ঝিল শ্মশানে। সেখানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে জুনিয়র ওয়ারেণ্ট অফিসার এমপি বিজুরাজ এবং সার্জেণ্ট এসকে দত্তের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল জানালেন শেষ শ্রদ্ধা। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকেও তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সিআইএসএফের পক্ষ থেকে গ্যান স্যালুটের মাধ্যমে তাঁকে বিদায় জানানো হয়। এদিন সিআইএসএফের পক্ষ থেকে ভারতের জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয় মৃত জওয়ানের ছেলে দেবজিতের হাতে। মহালয়ার দুদিন আগেই বাড়ি এসেছিলেন দীনঙ্করবাবু। জানিয়ে গিয়েছিলেন ২০ নভেম্বর ফের বাড়ি আসবেন। এলেন তার ১১দিন আগেই কফিন বন্দী হয়ে।




Like Us On Facebook