বর্ধমান শহরের গোদায় স্যাটেলাইট টাউনশিপের জন্য অধিগৃহীত জমির টাকা জমির মালিককে না মেটানোয় বৃহস্পতিবার বর্ধমানের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সেখ মহম্মদ রেজা বর্ধমানের জেলাশাসককে জেলে পোড়ার নির্দেশ দিলেন। এই ঘটনায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে বর্ধমান আদালত চত্বরে। এই ধরণের রায়কে নজীরবিহীন বলে আখ্যা দিয়েছেন আইনজীবী মহল। বিচারক আগামী সোমবার জেলাশাসককে স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

বর্ধমান আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫-২০০৬ সালে বর্ধমানের গোদায় স্যাটেলাইট টাউনশিপ তৈরির জন্য জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করেছিল সরকার। জমির মূল্য বাবদ ৫ হাজার ৮৮৬ টাকা শতক পিছু দাম দেয় সরকার। জমি অধিগ্রহণে গোদার বাসিন্দা আব্দুল রহিম, আব্দুল আজিজ এবং আব্দুল আলিমের মোট ১ একর ৭৩ শতক জমিও অধিগৃহিত হয়। কিন্তু সরকার নির্ধারিত এই দাম তাদের পছন্দ না হওয়ায় তাঁরা আদালতে মামলা করেন। আদালত শতক পিছু ৩৫ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সরকারকে। এই দাম অনুসারে জমির মালিকের ১ একর ৭৩ শতক জমির জন্য সরকারের কাছে পাওনা হয় ১ কোটি ৩৪ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। এরইসঙ্গে টাকা না মেটানো পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ারও নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১২ সালে আদালত সরকারকে টাকা মেটানোর এই নির্দেশ দিলেও আজও টাকা পাননি জমির মালিকরা। ইতিমধ্যে তাঁদের প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা। সরকার জমির বর্ধিত মূল্য বাবদ এই টাকা না মেটানোয় এবং আদালতের এই নির্দেশ না মানায় ফের মামলা করেন। সরকার নানা অছিলায় জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ না দেওয়ায় জমির মালিক জেলাশাসককে জেলে পোড়ার জন্য আদালতে আবেদন জানান। আর বৃহস্পতিবার সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্ধমানের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সেখ মহম্মদ রেজা বর্ধমানের জেলাশাসককে সিভিল জেলে পোড়ার নির্দেশ জারি করেছেন।

সোমবার হাজির না হলে জেলাশাসকের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন এদিন বিচারক। ১ মাস জেল খাটতে হবে জেলাশাসককে। এজন্য এদিনই জমির মালিককে অস্তিত্ব ভাতা বাবদ ১৮৫০ টাকা আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। জমির মালিক ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে ওই টাকা জমাও করেছেন। আর এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার বর্ধমান আদালত চত্বরে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। জমির মালিকের আইনজীবী রাজকুমার গুপ্তা জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আনতে না পারলে জেলাশাসককে জেলে যেতেই হবে। অন্যদিকে, এই রায়ের বিষয়ে এদিন জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তিনি আদালতের কোন নির্দেশ পাননি। নির্দেশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফাইল চিত্র
Like Us On Facebook