নেশার টানে একই পেশায় টানা ২৩ বছর পদোন্নতি ভুলে আছেন বর্ধমানের লক্ষ্মীপুর মাঠের প্রশান্ত কুন্ডু। প্রশান্ত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ‘ডেটা ম্যানেজম্যান্ট’ বিভাগের অফিসার। ব্যাঙ্কের অফিসার হলেও তার নেশা ‘ম্যাজিক’ দেখানো। তিনি দু’যুগ ধরে একই পেশায়, একই পদে রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ৫০০০ এর উপর ম্যাজিকের শো করেছেন।
কি ভাবে এই পেশায়, জাদুকর বর্ধমান ডট্ কম কে জানালেন “মাত্র ৯ বছর বয়সে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ দেখি রাস্তার ধারে একজন ‘মাদারি খেলা’ দেখাচ্ছে। একজন মানুষের জিব কাটা, গোটা শরীর সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। ম্যাজিসিয়ান দশর্কদের উদ্দেশ্যে বলছে, খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ এখান থেকে যাবেন না। যে যাবে তার মা মারা যেতে পারেন। ম্যাজিসিয়ানের এই কথা শোনার পর রীতিমতো ভয় পেলাম, মা কে হারাতে চাই না। সেদিন বাড়ি ফিরতে দেরি হল। বাড়ি ফিরে একটি কথা আমায় ব্যাতিব্যস্ত করে তোলে যে কোন শক্তির বলে একজন ম্যাজিসিয়ান তার দর্শকদের খেলার শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে। এটাই ছিল আমার জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’। সেই দিন থেকে ‘ম্যাজিসিয়ান’ হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু। বিখ্যাত ম্যাজিক গবেষক সমীরণ আচার্য্য আমার আইডল। শুরু করলাম ম্যাজিক নিয়ে পড়াশুনা। কলকাতায় চাকরির সুবাদে মেম্বারশিপ নিলাম নাশ্যানাল লাইব্রেরিতে। ‘সম্মোহন’ নিয়ে লেখা যাবতীয় বইয়ের তালাশ শুরু করলাম “।
জাদুকর আরও জানালেন, বর্ধমান শহরে থাকলে জাদু নিয়ে কাজ করার সুবিধা হবে বলে গত দু’যুগ ধরে পদোন্নতির হাতছানিতে তিনি সাড়া দেননি। কাজ সেরে বাড়ি ফিরেই ম্যাজিক চর্চায় মাতেন ‘জাদুকর’ প্রশান্ত। ৩০ বছর পার করলাম মাজিক নিয়ে। হঠাৎ একদিন সাক্ষাৎ বর্ধমান ছোটনিলপুরের রামকৃষ্ণ মিশন-এর মহারাজের সঙ্গে, তিনি আমাকে বলেন গরিব ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিতে, ম্যাজিকে আগ্রহী এমন জনা দশ ছাত্রছাত্রীকে জাদুবিদ্যার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন নিজের বাড়িতে। তিনি শুধু জাদুকর নন, চিত্রকলাতেও সিদ্ধহস্ত। চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে প্রায়ই তিনি দেশ-বিদেশে জমিয়ে ম্যাজিক শো করে বেড়ান। ৫২ বছর বয়সি এই জাদুকর বর্ধমান ডট্ কম কে এক মজার অভিজ্ঞার কথা শোনালেন, পুরুলিয়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামে শো করতে গিয়ে মঞ্চ ভেঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পরেছিলেন। কিন্তু সেই দুর্ঘটনাকে ম্যাজিক ভেবে দর্শকেরা হাততালি দিয়েছিলেন।