সোমবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব বর্ধমানের জায়গায় জায়গায় বিক্ষিপ্ত ঘটনায় প্রাণহানির কোনো ঘটনা না ঘটলেও ভোট অশান্তি এড়ানো গেল না। এদিন দুপুর প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ মেমারি ২-এর ছোট মশাগড়িয়ার ১০৩ নং বুথে ঢুকে পড়ে একদল দুষ্কৃতী। আচমকাই তাঁরা ব্যালট পেপার লুঠ করে পালিয়ে যান। এই ঘটনায় এই বুথে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্যালট লুঠে বাধা দেওয়ায় বুথের ভোটকর্মীদের মারধোর করা হয়। এই বুথে মোট ভোটার রয়েছেন ৪১৫। বুথের ভোটকর্মীরা জানিয়েছেন, সকাল থেকে প্রায় শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট প্রক্রিয়া চলছিল। প্রায় ৬০ টি ভোট হওয়ার পর আচমকাই তাদের মারধোর করে দুষ্কৃতীরা ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়।
পাশাপাশি এদিন মেমারির গন্তার-২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের কবীরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯৬ নং বুথে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে প্রথম ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তানিয়ে বিরোধী সিপিএম, বিজেপিই শুধু নয় রীতিমত গ্রামবাসীরাও ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠেন। এরই মাঝে কয়েকজন দুষ্কৃতী বুথের ভেতর থেকে ব্যালট পেপার লুঠ করে তা বুথের বাইরে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। কয়েকজন দুষ্কৃতী ব্যালট বক্সগুলিকে তুলে নিয়ে পাশের একটি পুকুরের জলে ফেলে দেন। আর পরপর গ্রামবাসীদের সামনে এই ঘটনা ঘটার পরই রীতিমত ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা কয়েকজন দুষ্কৃতিকে ধরে ফেলেন। বাকিরা পালিয়ে যায়। গ্রামবাসীরা ধৃত কয়েকজন দুষ্কৃতীকে বেধড়ক মারধর করে তাদের গ্রামছাড়া করে দেন গ্রামবাসীরা।
মেমারির গন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কবীরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর মেমারির বাহারপুর মন্ডলজোনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৯/১ নং বুথে ব্যালট লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। মেমারির কবিরপুরের পাশাপাশি ভোট বন্ধ মণ্ডলজোনা গ্রামে। প্রিসাইডিং অফিসার জানান, সকাল থেকে ভোট শান্তিপূর্ণ হচ্ছিল। কিন্তু ১১ টার পর একদল দুষ্কৃতী মুখে কালো কাপড় বেঁধে বুথে ঢুকে বুথের দখল নেয়। কিছুক্ষণ পর গ্রামবাসীদের একাংশ বুথ থেকে ব্যালট বাক্স নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ব্যালট বাক্স উদ্ধার করে। তবে আর নতুন করে ভোট নেওয়া হয় নি। এখানে দুপুর ৩ টে বাজতে না বাজতেই ভোটকর্মীরা পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যান।
পূর্ব বর্ধমানের ভাতাড়ের সাহেবগঞ্জ ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ওড়গ্রাম আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪১ নং বুথের বাইরে বোমাবাজি ও বুথে ভাঙচুরের অভিযোগ। ব্যালট পেপার ফেলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তৃণমূল ও নির্দলের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষও ঘটে। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়। অপরদিকে, রায়না ১নং ব্লকের রাজীনগরে ভোটকর্মীদের বুথের বাইরে বার করে দিয়ে ব্যালট বাক্স খুলে বিজেপি ও সিপিএমের পক্ষে পড়া ব্যালট বার করে সেগুলি পুড়িয়ে দেবার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন দুষ্কৃতীর দিকে। ব্যালট পুড়িয়ে দেবার পর ভোট গণনার কাজও করেন কয়েকজন। এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তারাই উল্টে জানান, নির্বাচন কমিশনের কাজ এগিয়ে রাখছেন তাঁরা।
এদিনের সামগ্রিক ভোট সম্পর্কে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, বেশ কিছু অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। এরপরই পুননির্বাচন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, যখনই তিনি কোনো অভিযোগ পেয়েছেন সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে, এদিনের ভোট প্রক্রিয়া সম্পর্কে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, মানুষ এদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা সমস্ত আসনেই জয়ী হবেন।