মেমারি কলেজের গ্রুপ সি পদের কর্মী তথা মেমারি ১ নং ব্লক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি এবং কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্য মুকেশ শর্মার দাপটে তটস্থ হয়ে পদত্যাগপত্র পাঠালেন কলেজ অধ্যক্ষ ড. দেবাশীষ চক্রবর্তী। একইসঙ্গে ওই কর্মীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে আরও দুই জিবি সদস্য তথা অধ্যাপক প্রতিনিধি সুকান্ত সাহা এবং অনুপম গড়াইও পদত্যাগপত্র দিতে চলেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা জেলা জুড়ে।

বিশেষত, একজন গ্রুপ সি-র চাকরীরত কর্মী কিভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদের নেতা হতে পারে? এই প্রশ্নের পাশাপাশি বেশ কিছুদিন ধরেই মেমারি কলেজে বেতাজ বাদশা হয়ে ওঠার পিছনে কাদের হাত রয়েছে তা নিয়েও চাপান উতোর শুরু হয়েছে কলেজ চত্বরে। দীর্ঘদিন ধরেই ওই কর্মীর বিরুদ্ধে অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ উঠলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ চরমে উঠেছিল। মঙ্গলবার কলেজের গরমের ছুটি সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক চলাকালীন তার নেতৃত্বে কতিপয় ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ সহ প্রায় ৩০জন অধ্যাপক-অধ্যাপিকাকে একটি ঘরের মধ্যে দুপুর প্রায় দেড়টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এই সময় সমস্ত আলো-ফ্যান, ঘরের জানালাও বন্ধ করে রাখা হয় বলে অভিযোগ। খোদ অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, তিনি হার্টের রোগী। তাঁর কাছ থেকে জলের বোতল ফেলে দেওয়া হয়। তাঁর বাথরুমে চাবি দেওয়া হয়। এই ঘেরাও কর্মসূচিতেই রীতিমত অসুস্থ হয়ে পড়েন সোমা দেবভূতি এবং সুরঞ্জিতা দে নামে দুই অধ্যাপিকা সহ প্রায় ৬জন অধ্যাপক-অধ্যাপিকা।

অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশ অনুসারে গরমের ছুটি ২৭ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেবার কথা। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য মেমারি কলেজকে ব্যবহার করায় ১০দিন ছুটি দিতে হয়। তাই কলেজ অধ্যক্ষ গরমের ছুটির দিন কমিয়ে ২৯ মে থেকে ২৩ জুন করার প্রস্তাব দেন অধ্যাপকদের। অধ্যাপকদের দাবী, তাঁরা সেটা মেনেও নেন। আর এই আলোচনার সময়ই সেখানে ঢুকে পড়ে রীতিমত অশ্রাব্য ভাষায় অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের গালিগালাজ করেন ওই অশিক্ষক কর্মী। অধ্যক্ষ সহ অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা জানিয়েছেন, গোটা কলেজে ওই কর্মীই শেষ কথা। এমনকি মুনমুন মুখার্জী নামে একজন অধ্যাপিকার ৯ মাস প্রমোশন সংক্রান্ত ফাইল আটকেও রেখে দিয়েছেন। অধ্যাপিকারা এদিন অভিযোগ করেছেন, অধ্যাপিকাদের রাস্তায় একা থাকাকালীন দেখে নেওয়ার হুমকি থেকে অশ্রাব্য কটুক্তি সবই সহ্য করতে হয় তাঁদের।

কলেজ অধ্যক্ষ ড. দেবাশীষ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওই অশিক্ষক কর্মী রীতিমত গোটা কলেজে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বারবার একই ঘটনা এবং তার এই কার্যকলাপের ঘটনায় কলেজের গর্ভনিং বডির সভাপতিকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বুধবার তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিমাই সাহা না থাকায় তাঁরা দেখা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার রমেন সরের সঙ্গে। রেজিষ্টার জানিয়েছেন, এদিন কলেজ অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের বক্তব্য শুনেছেন। বৃহস্পতিবার তাঁদের ফের আসতে বলা হয়েছে। উপাচার্য, রেজিষ্টার এবং কলেজ সমূহের পরীক্ষা নিয়ামকের উপস্থিতিতে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

অন্যদিকে, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই মুকেশ শর্মা জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা দোষারোপ করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, তিনি কখনই অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের আটকে রেখে নির্যাতন করেননি। তিনি সেখানে যাননি। তবে দুপুর দেড়টা নাগাদ সংস্কৃত বিভাগে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অধ্যাপকদের একটি মিটিং চলার সময় তার ভিডিও রেকর্ডিং করছিলেন একজন অধ্যাপিকা। তিনি খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি কেন এটা করছেন। এর বেশি কিছু ঘটেনি। গোটা ঘটনার তদন্ত হলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।

Like Us On Facebook