মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও জমি বন্ধক দিয়েই চিকিৎসা করাতে হল পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার দুর্গাডাঙা গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর মণ্ডলকে। শুধু তাই নয়, পরপর দুটি জমি বন্ধক দিয়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিয়েও তাঁর সঠিক ও যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ায় বেসরকারী নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগও জানালেন আলমগীর মণ্ডল। এই ব্যাপারে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে বর্ধমানের ওই বেসরকারী নার্সিংহোমের ঘটনায়। বর্ধমান জেলা কংগ্রেসের কিষাণ ও ক্ষেতমজুর কমিটি এই ঘটনায় পথেও নেমেছে ওই ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য। মেমারির দুর্গাডাঙা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় গরুর ব্যবসায়ী আলমগীর মণ্ডল জানিয়েছেন, প্রায় ১১ মাস আগে তিনি মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে বাঁ পায়ে এবং ডান কাঁধে বড়সড় আঘাত পান। ভেঙে যায় তাঁর বাঁ পায়ের হিপজয়েণ্ট এবং ডান কাঁধের কলারবোন। এই ঘটনায় তিনি বর্ধমানের একটি বেসরকারী নার্সিংহোমে ভর্তি হন। আলমগীর মণ্ডল অভিযোগ করেছেন, চিকিৎসকরা তাঁকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর জানান, পায়ের অপারেশন করার জন্য ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা লাগবে। বাধ্য হয়ে তিনি তাঁরা দুটি জমি বন্ধক দিয়ে ওই টাকা জোগাড় করেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, অপারেশন করে তাঁর পায়ে প্লেট ও বল বসানো হয়। অর্থের অভাবে কাঁধের কোনো চিকিৎসাই করা হয়নি আজও। এরপর ৭দিন পর তাঁকে জানানো হয় আরও আড়াইলক্ষ টাকা লাগবে। কিন্তু আলমগীর মণ্ডল তা দিতে না পারায় কার্যত তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়েই ৭দিন পর নার্সিংহোম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তিনি জানিয়েছেন, এই অবস্থায় বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু ক্রমশই তাঁর পা অবশ হতে শুরু করে। এরপর প্রতিবেশীদের এবং কিষাণ ও ক্ষেত মজদুর কংগ্রেসের জেলা সহ সভাপতি তপন লায়েকের উদ্যোগে তাঁকে ভর্তি করা হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আলমগীরবাবু জানিয়েছেন, বর্ধমান হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে পরীক্ষা করে জানান, তাঁর পায়ে বলের কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ ওই বল লাগানোর জন্যই তাঁর কাছ থেকে ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ৭৫ হাজার টাকা নেন। এরপর বর্ধমান হাসপাতালেরে চিকিৎসকরাই ফের তাঁর অস্ত্রোপচার করেন। আলমগীর মণ্ডল জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রায় ১১ মাস তিনি বেরোজগার অবস্থায় রয়েছেন। কার্যত স্ত্রী ডালু বিবি ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছেন। এক ছেলে অষ্টম শ্রেণীতে এবং এক মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ছে। আলমগীরবাবু বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কাছে এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এবং ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে এই ঘটনায় তিনি আর্থিক ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানিয়েছেন।

অপরদিকে, এই অভিযোগ সম্পর্কে শুক্রবার বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (স্বাস্থ্য) রত্নেশ্বর রায় শুনানিতে ডেকে পাঠান দুপক্ষকেই। কিন্তু আলমগীর মণ্ডলরা হাজির হলেও সময়ে হাজির হননি ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। যদিও তাঁরা পরে এসে অতিরিক্ত জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন। অন্যদিকে, এব্যাপারে অতিরিক্ত জেলাশাসক (স্বাস্থ্য) রত্নেশ্বর রায় জানিয়েছেন, এদিন দুপক্ষের বক্তব্য শোনা হয়েছে। আগামী সোমবারের মধ্যে ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে এব্যাপারে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

Like Us On Facebook