ধান উঠতে না উঠতেই গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়েই শুরু হয়ে গেছে আলু বসানার তোড়জোড়। আর আলু চাষ শুরু হতেই বাজার থেকে উধাও ১০:২৬:২৬ সার। যা নিয়ে গোটা জেলা জুড়েই শুরু হয়েছে হাহাকার। আর এই সুযোগেই কিছু অসাধু সার ব্যবসায়ী জোরকদমে সারের কালোবাজারি করছেন বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। খণ্ডঘোষের আলু চাষী অরবিন্দ পাল জানিয়েছেন, এবছর তিনি প্রায় দেড় বিঘে জমিতে আলু চাষ করেছেন। এবছর প্রধান সমস্যা ১০:২৬:২৬ সার। আলু বসানোর সময় ১০:২৬:২৬ সার পাননি। যদিও অনেক কষ্টে এখান ওখান থেকে ১৫০০ টাকার চাপান ২৫০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। বস্তায় সারের দাম লেখা রয়েছে ১৪৫০-১৪৬০ টাকা। দাম বেশি এবং বাজারে না থাকায় প্রয়োজনের থেকে পরিমাণে কম ব্যবহার করতে হচ্ছে। দোকানে মাল না থাকায় কালোবাজারি চলছে। সারা বছর ধরেই যে চাষ করতে যাব সেই চাষেই গুরুত্বপূর্ণ সারের ক্ষেত্রেই প্রায় ১ মাস ধরে এই সমস্যা তৈরী হয়। তিনি দাবি করেছেন, দোকানে ঘুরে দেখবেন সার নেই বলবে। তেমন বুঝলে বেশি দামে বিক্রি করবে। এলাকার আর এক আলু চাষী কুশ রায় জানিয়েছেন, পটাশ, ফসফেট ২০:২০:০০ ব্যবহার করছেন। ১০:২৬:২৬ পাননি বলেই বিকল্প ব্যবহার। দাম বেশি হলেও পাচ্ছেন না। স্বাভাবিকভাবেই ফলন কতটা হবে বুঝতে পারছেন না। পাশাপাশি বিকল্প সার ব্যবহার করেও খরচ বাড়ছে।

এদিকে, সারের এই আকাল এবং কালোবাজারি নিয়ে কৃষি দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর আশীষকুমার জানিয়েছেন, এনপিকে ১০:২৬:২৬ – এটা সত্যিই খুব ভালো সার। কিন্তু, জেলার সব আলু চাষীরা এটা নিতে চাইলে পাবে না। সেজন্য, এই খাদ্যপ্রাণ যুক্ত সার নিজেরা তৈরি করে নিতে পারেন। তাহলে হাহাকার কমে যাবে। বর্ধমানে সার প্রচুর আছে। কিন্তু একটা ব্রান্ডের সার অনেক নেই। কালোবাজারি রোখার জন্য মনিটরিং চলছে। তেমন খোঁজ পেলে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন ১০:২৬:২৬ – এর বিকল্প হিসাবে ১৫:১৫:১৫ এবং পটাশ বা ২০:২০:০০ এবং পটাশ ব্যবহার করতে পারেন চাষীরা। সারের কালোবাজারি নিয়ে জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল জানিয়েছেন, সারের কালোবাজারি নিয়ে লিখিত কোনও অভিযোগ নেই। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম জোগানের অভাব দেখিয়ে চড়া দামে সার বিক্রি করতে চাইছেন এরকম শোনা যাচ্ছে। এব্যাপারে সমস্ত ব্লকে এ ডি এ, বি ডি ও, জনপ্রতিনিধিরা নজর রাখছেন। আলু চাষের সব থেকে উপযোগী ১০:২৬:২৬ ইফকো বা গ্রোমোর সারের অভাব নেই। ১৪৭০ এবং ১৪৩৪ টাকা দাম। পাওয়া যাচ্ছে না এমন অভিযোগ নেই, অভিযোগ পেলেই সত্ত্বর সেখানে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, বুধবারই জামালপুরে ডিএপুটি ডি ডিএ-কে পাঠানো হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিষয়ে নজরদারী চলছে। এছাড়াও অন্য সারও ব্যবহারের জন্য চাষীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এবছর ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত বছর বৃষ্টির জন্য কিছুটা কম ৬৬ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। বর্ধমানের সার ব্যবসায়ী রাজীব মণ্ডল জানিয়েছেন, চাষীরা ১০:২৬:২৬ সারে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বলেই সেই সারই তাঁরা চাইছেন। কিন্তু কোম্পানী এই সার তৈরি করে লাভ পাচ্ছে না। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার ভর্তুকিও কমিয়ে দিয়েছে। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম সার বাজারে আসছে। রাজীববাবু জানিয়েছেন, বিকল্প অনেকরকম সার আছে। সে ব্যাপারে সরকারী পর্যায়ে চাষীদের সচেতন করার উদ্যোগ প্রয়োজন।

Like Us On Facebook