৪৫ কুইন্টালের পরিবর্তে চাষিদের কাছে একলপ্তে ৩০ কুইন্টাল ধান কেনার প্রস্তাব নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত মেনে চাষিরা ধান্য-ক্রয় কেন্দ্রে যেতে রাজি হবে কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার খাদ্য দফতরের জেলাস্তরের মনিটরিং বৈঠকে জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলার উপস্থিতিতে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে ঠিক হয়েছে, জেলার আরও বেশি চাষিদের সহায়কমূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ দেওয়ার জন্যে জমির নথি দেখে প্রথম দফায় ৩০ কুইন্টাল পর্যন্ত ধান নেওয়া হবে। পরে ওই চাষি আরও ১৫ কুইন্টাল ধান সহায়কমূল্যে দেওয়ার সুযোগ পাবেন। খাদ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, ওই সিদ্ধান্ত মেনেই চাষিরা ধান নিয়ে ধান্য-ক্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন। দফতরের দাবি, গত মরসুমে ১,৯৮,০২০ জন চাষির কাছ থেকে পৌনে ছ’লক্ষ টন ধান কেনা হয়েছিল। এ বার জেলা প্রশাসন ঠিক করেছে আড়াই লক্ষ চাষির কাছ থেকে রাজ্যের খাদ্য দফতরের ঠিক করে দেওয়া ৬ লক্ষ ৯০০ টন ধান চলতি মরসুমে কেনা হবে।
জেলার খাদ্য নিয়ামক অসীম নন্দী বলেন, ‘আরও বেশি প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। সে জন্যেই জেলাস্তরের বৈঠকের প্রস্তাব মেনে চাষিদের কাছ থেকে প্রথম দফায় একলপ্তে ৩০ কুইন্টাল ধান কেনা হচ্ছে।’ খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, কৃষি দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী একজন চাষির কাছ থেকে প্রতি হেক্টরে ৫.১৬৪ টন ধান কেনা হবে। জেলাস্তরের ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছে, জেলায় ৪০টি ধান্য-ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। আরও তিনটে ধান্য-ক্রয় কেন্দ্র খোলা হবে। খাদ্য দফতর ছাড়াও সহযোগী সংস্থা হিসেবে ১০৫টি সমবায় সমিতি, ৭৪টি সঙ্ঘ, ৩৯টি ফার্মার প্রোডিউসার সোসাইটি বা এফপিএস ধান কিনবে বলে ঠিক হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত জেলায় ২১৩৭ টন ধান কেনা হয়েছে।
কৃষক সংগঠনগুলির দাবি, ধান কেনা নিয়ে প্রতি বছর ‘খামখেয়ালিপনার’ শিকার হয় চাষিরা। সিপিএমের কৃষকসভার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিনোদ ঘোষের অভিযোগ, ৩০ কুইন্টালের পর বাড়তি ধান কোথায় বিক্রি করবেন চাষিরা? এই প্রশ্নেই তো চাষিরা ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। বিজেপির কৃষক সংগঠনের নেতা দেবাশিস সরকারও মনে করেন, ঘুর পথে চাষিদের ফড়েদের কাছে যেতে বাধ্য করছে প্রশাসন। ধান্য ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবি, খোলা বাজারের চেয়ে সহায়ক মূল্যে ধানের দাম প্রায় ৩০০ টাকা বেশি। খোলা বাজারে ধানের দাম বাড়তে থাকলেই সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রিতে চাষিরা উৎসাহ হারাবেন। তৃণমূলের কিসান ও খেতমজুর সংগঠনের জেলার সভাপতি, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, ‘বেশি পরিমাণ প্রান্তিক চাষিদের কাছে পৌঁছানো ও ফড়েদের দৌরাত্ম্য আটকানোর জন্যই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’