বর্ধমানের বিখ্যাত সীতাভোগ-মিহিদানা ইতিমধ্যেই জিআই বা ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন’ তকমা পেয়ে গেছে। পূর্ব বর্ধমান জেলাতে রয়েছে কমবেশি প্রায় ১ হাজার মিষ্টির দোকান। বর্ধমান শহরেই রয়েছে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০ দোকান। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যেহেতু সীতাভোগ এবং মিহিদানা ইতিমধ্যেই জিআই তকমা পেয়েছে তাই যে কোনো দোকানদারই তা নিয়ে প্রচার করতে পারেন। যা থেকে সাধারণ খদ্দেররাও ঠকতে পারেন। আদপেই সংশ্লিষ্ট সেই দোকানদার জিআই অনুমোদিত সীতাভোগ বা মিহিদানা তৈরী করেছেন কিনা তা ক্রেতাদের পক্ষে জানা সম্ভবও নয়। কারণ এখনও কেবলমাত্র বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানার নাম শুনেই যে কোনো দোকান থেকেই মানুষ কিনে বাড়ি নিয়ে যান। অনেক সময় মিষ্টির গুণগত মান নিয়ে ওঠে অভিযোগও। আর এই সমস্যা থেকে বেড়িয়ে আসতে এবার তৎপর হল বর্ধমান জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বে বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠকও হয়ে গেল। জেলাশাসক জানিয়েছেন, এই সমস্যা থেকে বেড়িয়ে আসতে এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রথম ধাপে বর্ধমান শহরের ১৫-১৬টি দোকানকে তাঁরা চিহ্নিত করে তা পাঠাবেন রাজ্যের পেটেন্ট দপ্তর এবং সায়েন্স ও টেকনোলজি দপ্তরে। এই চিহ্নিত দোকানদারদের নিয়ে করা হবে কর্মশালা। জিআই নির্দিষ্ট মানের সীতাভোগ ও মিহিদানা যাঁরা তৈরী করতে পারবেন কেবলমাত্র তাঁরাই জিআই অনুমোদিত সীতাভোগ-মিহিদানা বিক্রির জন্য মনোনীত হবেন। ফলে এই ব্যবস্থা চালু হলে সাধারণ ক্রেতা থেকে সাধারণ মানুষ নির্দিষ্ট দোকান থেকেই তা কিনবেন। ঠকার সম্ভবনা কমবে।

এদিকে, এব্যাপারে ওই অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ সৌমেন দাস জানিয়েছেন, এর আগেই রাজ্য পেটেন্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মহুয়া হোম চৌধুরী তাঁদের সীতাভোগ-মিহিদানার প্যাকেজিং করার বিষয়ে জানিয়েছিলেন। তারপরেই তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে এব্যাপারে সহযোগিতা চান। এমনকি গত ২৯ জুন বর্ধমানে প্রশাসনিক সভা করতে আসার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কেও তাঁদের এই বিজ্ঞানসম্মত প্যাকেজিং করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচীবকে গোটা বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন। তিনিও জানিয়ে দেন, বিজ্ঞানসম্মত ভাবে প্যাকেজিং-এর জন্য রাজ্য সরকার সর্বতোভাবে চেষ্টা করবে। সৌমেনবাবু জানিয়েছেন, এদিনের বৈঠকে বর্ধমান জেলা শিল্প দপ্তরের জেনারেল ম্যানেজার সৈকত রায়ও হাজির ছিলেন। আগামী ২ আগষ্টের মধ্যে নির্দিষ্ট ১৬ টি দোকানের নামের তালিকা তাঁরা তুলে দেবেন তাঁর হাতে। তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যাঁরা গুণগত মান বজায় রেখেই সীতাভোগ-মিহিদানা তৈরী করছেন তাঁদের মধ্যে থেকেই এই নাম তারা তুলে দেবেন প্রশাসনের হাতে।

Like Us On Facebook