আকাঙ্খা কান্ডের ছায়া এবার বর্ধমানে। বাঁকুড়ার মেয়ে আকাঙ্খাকে খুন করে ঘরের মেঝেতে পুঁতে দিয়েছিল স্বামী উদয়ন। বাঁকুড়ার আশ্রম পাড়ার মেয়ে পুজাকেও খুন করে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির মেঝেতে পুতে রাখার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে। বর্ধমান থানার শক্তিগড়ের কাছে বেলনা গ্রামের এক গৃহবধুকে গত ২ বছর ধরে খুঁজে না পাওয়ায় পর সোমবার বিকালে একটি বাড়ির মেঝে খুঁড়ে উদ্ধার হল এক মহিলার দেহাবশেষ। এই ঘটনায়
ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩ বছর আগে বেলনা গ্রামের বাসিন্দা মুলুকচাঁদ সেনের সঙ্গে বিয়ে হয় বাঁকুড়ার আশ্রম পাড়ার বাসিন্দা পুজা সেনের। কিন্তু বিয়ের ১ বছর পর আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান পুজা সেন। এব্যাপারে পুজার মা মঞ্জু বাউড়ি ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল বাঁকুড়া মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর তদন্তে নামে বাঁকুড়ার পুলিশ। কিন্তু মুলুকচাঁদ সেন ফেরার হয়ে যাওয়ায় তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিল না বাঁকুড়া পুলিশ। এরপর সম্প্রতি বর্ধমান থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপরই ৭দিন আগে বর্ধমান থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে মুলুকচাঁদকে। তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে। এরপর ৩১ আগষ্ট ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাঁকুড়া ও বর্ধমান পুলিশ যৌথভাবে মুলুকচাঁদের দেখান বেলনা গ্রামের একটি বাড়িতে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। কিন্তু অনেক রাত পর্যন্ত খোঁড়াখুঁড়ি করেও কিছু মেলেনি। জিজ্ঞাসাবাদে মুলুকচাঁদ পুলিশকে জানায়, ২ বছর আগে ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল বেলনা গ্রামের একপাশে থাকা সেই সময়কার পরিত্যক্ত বাড়ির নীচে সে পূজাকে খুন করে পুঁতে দিয়েছিল।
এদিকে, সোমবার দুপুরে মুলুকচাঁদকে সঙ্গে নিয়ে বাঁকুড়ার মহিলা থানার পুলিশ এবং বর্ধমান থানার পুলিশ ম্যাজিষ্ট্রেট কৌশিক পালের উপস্থিতিতে ফের বেলনা গ্রামের ওই বাড়িতে হাজির হয়। বর্তমানে ওই বাড়ির মালিক দুর্গা সর্দার জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে তিনি এই বাড়ি কিনে মেরামত করে বসবাস করছেন। সোমবার দুপুরে মুলুকচাঁদের দেখানো জায়গায় ফের খোঁড়াখুঁড়ি করার পর মেলে এক মহিলার দেহাবশেষ। পাওয়া যায় গহনাও। ম্যাজিষ্টেট কৌশিক পাল জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে এই দেহাবশেষ কোনো মহিলার বলেই মনে হচ্ছে। ফরেনসিক টেস্টের জন্য হাড়গোড় সহ উদ্ধার হওয়া মাল পাঠানো হবে। অন্যদিকে, এদিন মুলুকচাঁদ পুলিশকে জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই সাংসারিক অশান্তির জেরে সে পুজাকে খুন করে এখানে পুঁতে দিয়েছিল। অপরদিকে, এদিন এই ঘটনার পর বেলনা গ্রামের মানুষজন নৃশংস্য এই খুনের ঘটনায় মুলুকচাঁদের ফাঁসির দাবি করেছেন। বড়শুল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গৌরাঙ্গলাল বসু জানিয়েছেন, এই নৃশংস্য ঘটনায় চরমতম শাস্তি হওয়া দরকার মুলুকচাঁদের। অন্যদিকে, খুনের এই ঘটনায় মুলুকচাঁদের সঙ্গে আর কেই জড়িত রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।