বর্ধমান শহরের খোসবাগানের একটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনার প্রায় ১৪ বছর পর বিচার পেলেন রোগীপক্ষ। আগামী ২১ আগষ্টের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা মৃত শিশুর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
জানা গেছে, গত ২০০৩ সালের ১৯ জুন রায়নার শ্যামসুন্দর এলাকার বাসিন্দা সুজিত মুখার্জী তাঁর ভাগ্নী দীপ্তি বক্সীকে প্রসবের জন্য বর্ধমানের খোসবাগানের এইচ কে নার্সিংহোমে ভর্তি করেন। ওই দিন বিকেলে সিজার করে দীপ্তিদেবীর একটি কন্যা সন্তান জন্মায়। যথারীতি সদ্যজাত শিশু ও মায়ের শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ও সুস্থ বলেই জানান চিকিৎসকরা।
সুজিত মুখার্জীর অভিযোগ, ২১ জুন শিশুটি তার মায়ের দুধ খেতে পারছে না বলে জানানো হলে, সেই সময় কর্তব্যরত আয়া শিশুটিকে মায়ের দুধ চামচে করে খাওয়াতে গেলে শিশুর শ্বাসনালীতে দুধ ঢুকে গিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। শুরু হয় শিশুর শ্বাসকষ্ট। সঙ্গে সঙ্গে ডাকা হয় বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসককে। তাঁর পরামর্শে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান নার্সিংহোমে। সেখানেই পরের দিন ২২ জুন রাত ২টো নাগাদ মারা যায় শিশুটি।
এরপর সুজিতবাবু নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে বর্ধমানের ক্রেতা সুরক্ষা ফোরামে নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সুজিতবাবু। বর্ধমান জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত গত ২০১৩ সালে ১৪ মার্চ সমস্ত দিক বিচার বিবেচনা করে নার্সিংহোমের গাফিলতির জন্য তাদের দায়ী করে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু নিম্ন আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এইচ কে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ প্রথমে রাজ্য এবং পরে কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতেও যান। কিন্তু উর্ধতন দুটি আদালতই নিম্ন আদালতের এই রায়কেই বহাল রেখে অবশেষে সম্প্রতি রায় ঘোষণা করেন সুজিতবাবুর পক্ষেই।
উল্লেখ্য, এই মামলায় সুজিতবাবু ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেছিলেন। কিন্তু আদালত সবদিক বিচার করে নিম্ন আদালতের রায়কে বহাল রেখেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে আগামী ২১ আগষ্টের মধ্যে রোগীপক্ষকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। কার্যত প্রায় ১৪ বছর পর আদালতের এই রায়ে খুশী সুজিতবাবুর পরিবার। যদিও এব্যাপারে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।