স্বামীর সঙ্গে অন্য মহিলার অবৈধ সম্পর্ক। প্রতিদিনই সেই স্বামীর হাতেই অত্যাচারিত। দৈনন্দিন রাজমিস্ত্রীর কাজ সেরে উপার্জনের অর্থ মদ, গাঁজা আর অন্য মহিলার পিছনেই ব্যয় করা – প্রতিদিনই এই অভিযোগের পাল্লা বাড়ছিলই। অথচ একটি মাত্র ফুটফুটে সন্তান। পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠরত বর্ধমানের একটি ভাল স্কুলে। তাকে মানুষ করার জন্য কোনো উদ্যোগই নেই বাবার। তবুও সম্পর্কটাকে টেনে নিয়ে চলেছিলেন নমিতা দে। কিন্তু ধৈয্য, সহ্যের বাঁধ ভাঙল রবিবার রাত্রেই। মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিলেন স্বামীকে বোঝানোর জন্য তাঁর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে। তাই সন্ধ্যে নামতেই ছেলেকে দিয়ে এসেছিলেন কাছেই বাপের বাড়িতে। ফিরে এসে ফের মদ্যপ স্বামীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। উল্টে স্বামীই তাঁকে গলা টিপে খুন করতে উদ্যত হয়েছিলেন। আর নিজের প্রাণ বাঁচাতে হাতের নাগালের মধ্যে পেয়ে যাওয়া রাজমিস্ত্রীর বাসলে(হাতুড়ি) দিয়ে পরপর দু ঘা মাথায়। লুটিয়ে পড়েছিল স্বামী শ্যামল দে (৪৫)। মরেই গেছে ভেবে এরপর স্বামীর দেহকে বাড়িতে রেখেই তালাবন্দি করে প্রায় ১০ কিমি রাস্তা সাইকেল চালিয়ে সোজা রাত্রি প্রায় ১২ টা নাগাদ হাজির হন বর্ধমান থানায়। কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারকে জানান, তিনি তাঁর স্বামীকে খুন করেছেন। হতচকিত হয়ে পড়েছিলেন বর্ধমান থানার পুলিশ কর্মীরাই। নমিতাদেবীর কথামত এরপর পুলিশ গিয়ে হাজির হন বর্ধমানের বেচারহাট কুণ্ডুপাড়া এলাকায়। তালা খুলে উদ্ধার করেন শ্যামল দে-র নিথর দেহ। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
নমিতা দে জানিয়েছেন, লাগাতার অত্যাচার আর সহ্য হচ্ছিল না। বারবার বলা সত্ত্বেও শোধরায় নি স্বামী। দুটি পরিবারের মধ্যে এই অশান্তি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনায় বসাও হয়।গ্রামের সালিশী সভাতেও মীমাংসা হয়। কিছুদিন ঠিকঠাক চলার পর ফের একই অবস্থা। যদিও তিনি জানিয়েছেন, তিনি খুন করতে চাননি। সবক শেখাতে চেয়েছিলেন। রবিবার রাত্রি প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ালো বর্ধমান থানার বেচারহাট কুণ্ডুপাড়া এলাকায়। নমিতা দের বাবা নৃপেন পাল, মা আলো পাল এবং বিবাহিত বোন কবিতা দত্ত সকলেই জানিয়েছেন, প্রায় ১২ বছর আগে আসাম থেকে কাজের সন্ধানে বর্ধমানে আসে শ্যামল দে। পেশায় রাজমিস্ত্রী। এরপরই তার সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে বিয়ে করেন নমিতা। যদিও নমিতাদেবীর বাপের বাড়ির লোকজন এই বিয়েতে মত দেননি। কিছুটা বাড়ির অমতেই অজানা অচেনা এই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে আপত্তি ছিল নৃপেনবাবুদের। নমিতা দে-র বোন কবিতা দত্ত জানিয়েছেন, বিয়ের কয়েকবছর সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু সম্প্রতি শ্যামল দে অন্য একটি বিধবা মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হবার পর থেকেই শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা। তিনি জানিয়েছেন, ইদানীং সংসার চালাতে কোনো টাকাই দিত না শ্যামল। ফলে ঠোঙা তৈরী করে ছেলের পড়াশোনা এবং সংসারের খরচ জোগাড় করত নমিতা। এইভাবে চলার মাঝেই রবিবার সন্ধ্যে থেকেই দফায় দফায় নমিতার ওপর চড়াও হয় শ্যামল। এরপরই নমিতাদেবী তাঁর ছেলেকে তাঁর বাপের বাড়িতে দিয়ে ফিরে যান নিজের ঘরে। তিনি জানিয়েছেন, নমিতাদেবীর সঙ্গে বিয়ের কয়েকবছর পর তাঁরা শুনতে পান শ্যামল আসামেও একটি বিয়ে করেছিল। সেখানে নাকি সে কয়েকজনকে খুন করে পালিয়ে আসে বর্ধমানে। এদিকে এই ঘটনায় বর্ধমান থানার পুলিশ নমিতাদেবীর বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় মামলা রুজু করেছে। এদিন তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।