শিশুদের অপুষ্টি জনিত রোগ দূর করতে এবং রোগ প্রতিরোধক শক্তি বাড়াতে সদ্যোজাতদের হলুদ দুধের প্রয়োজন, এমনটাই মনে করেন অনেক স্বাস্থ্যবিদ। শিশুর জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের শরীর থেকে যে হলুদ দুধ নির্গত হয়, সেই দুধেই রয়েছে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ও অন্য অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ। এমনকী জন্মের প্রথম ছ’মাস মাতৃদুগ্ধই শিশুর প্রধান খাদ্য। কিন্তু অনেক মায়ের শারীরিক সমস্যার জন্য নবজাতকরা হলুদ দুধ পায় না আবার হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়েও মাতৃদুগ্ধ পায় না নবজাতকরা। সেই সব শিশু দুর্বল হয়েই জীবনের যাত্রা শুরু করে। তাই শিশুদের সুস্থ ও সবল রাখতে বর্ধমান হাসপাতাল ‘মাতৃদুগ্ধ ব্যাঙ্ক’ গড়ার পদক্ষেপ নিয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মায়েরাই বাড়তি দুধ দিয়ে ওই ব্যাঙ্ক ভরিয়ে তুলবেন। এর ফলে যে সব সদ্যোজাত বা শিশু নানা কারণে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেই সব শিশুদেরকে ব্যাঙ্ক থেকে প্রয়োজন মতো দুধ দেওয়া হবে।’ বর্ধমান মেডিক্যালে প্রতি বছর ২০ হাজারের মতো শিশুর জন্ম হয়। তারমধ্যে ৮ হাজার শিশু অপুষ্টি-সহ নানা কারণে এসএনসিইউতে ভর্তি হয়। এ ছাড়াও আরও ৪ হাজার শিশু বছরে ‘রেফার’ হয়ে বর্ধমান মেডিক্যালের এসএনসিইউতে ভর্তি থাকে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান কে এল বারিক বলেন, ‘আনুমানিক ১২ হাজার শিশুর জন্য দুধ সংগ্রহ করে সংরক্ষিত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সেই পরিকল্পনায় অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।’
শিশু বিভাগের দাবি, বর্ধমান মেডিক্যালে পরিকাঠামোগত বাধায় ‘মাতৃ হাব’ গড়ে ওঠেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি অনুযায়ী, মা ও শিশুকে এক ছাদের তলায় রাখতে হবে। বর্ধমান মেডিক্যালে সেই ব্যবস্থা নেই। প্রসূতি বিভাগ থেকে শিশু বিভাগের দূরত্ব কয়েকশো মিটার। শিশুবিভাগে কোনও কারণে সদ্যোজাত বা নবজাতকদের ভর্তি রাখতে হলে মায়েদেরকে সেখানে গিয়ে দুধ খাওয়াতে যেতে হয়। কিংবা মা বাড়িতে থাকলে ভর্তি থাকা শিশু মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হয়। শিশু বিভাগের প্রধান ডাঃ কে এল বারিক বলেন, ‘সেই কারণে প্রসূতি ও স্ত্রী বিভাগের নীচেই মাতৃদুগ্ধ সংগ্রহ করা হবে। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের জন্যে প্রায় ৩১ লক্ষ টাকা খরচ ধরা হবে।’
হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ‘নতুন ভবনের সেমিনার রুমে মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আশা করা যায়, তিন মাসের মধ্যে এই প্রকল্প শুরু হয়ে যাবে। হাসপাতালে ভর্তি সব শিশুই ১০০% মাতৃদুগ্ধ পাবে।’ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, ‘মাতৃদুগ্ধ ব্যাঙ্ক’ গড়ে উঠলে একলপ্তে নবজাতকদের পুষ্টির জন্য একটা নব দিগন্ত খুলে যাবে। এরফলে নবজাতকদের পুষ্টি সংক্রান্ত সমস্যার সিংহভাগই মিটে যাবে।