পঞ্জিকা মতে বুধবার বিকাল থেকেই ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার তিথি শুরু হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবারই ভাইফোঁটার আয়োজন চলছে জোর কদমে। আর তার ঠিক আগেই বুধবার বিকেলে বর্ধমান শহরের সদরঘাট রোডে ৩নং শাঁখারীপুকুর মোড়ে বর্ধমান সদর প্যায়ারা নিউট্রিশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত হল গণ ভাইফোঁটা। যে ভাইফোঁটায় সৃষ্টি হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির।
ধর্মান্ধতার উর্ধে উঠে এই সোসাইটির সম্পাদক প্রলয় মজুমদার এবং তাঁর প্রায় ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভাইফোঁটাকে আক্ষরিক অর্থেই সম্প্রীতির অনন্য নজিরে পরিণত করলেন। এদিন এই মঞ্চে হাজির করা হয়েছিল বর্ধমান শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৫০জন বর্ষীয়ান, অবহেলিত মানুষকে। এঁদের মধ্যে অনেকেই অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। কেউ বয়সের ভারে কোন কাজই করতে পারেননা। কয়েকজন দিনমজুর, শ্রমিকের কাজ করেন। দুজন এসেছিলেন যাঁদের ঠিকমত চলাফেরার শক্তিও নেই। কিন্তু তাঁরা শারীরিক মানসিক কষ্টকে দূরে সরিয়ে ভাইফোঁটায় হাজির হলেন। হাজির ছিলেন একজন ক্যান্সার আক্রান্তও। এদিন এই ভাইফোঁটায় কেরিনা বিবি ফোঁটা দিলেন মহাদেব বাউড়িকে। সুজাতা পাল দিলেন সেখ সরিফের কপালে ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় চন্দনের শীতল ফোঁটা। একইভাবে ফোঁটা নিলেন সেখ রহমান, মণ্টু সেখ প্রমুখরাও। হিন্দু-মুসলিম সব মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল বর্ধমানের এই গণ ভাইফোঁটায়।
কেরিনা বিবি জানিয়েছেন, ভাইফোঁটার কথা জানতেন। কিন্তু কখনও অংশ নেননি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এই প্রথম এক অনাবিল আনন্দ মনকে ভরিয়ে তুলল। ভাইয়ের কপালে তাঁর মঙ্গল কামনায় এই ফোঁটা দিতে গিয়ে তিনি সত্যিই বিচলিতবোধ করছিলেন। ধর্মের কুসংস্কারকে দূরে সরিয়ে রেখে এদিন এই সম্প্রীতির নজীরে অংশ নেওয়া মহাদেব বাউড়ি জানিয়েছেন, গতবার তিনি এই সংস্থার উদ্যোগে প্রথম ভাইফোঁটা গ্রহণ করেছিলেন। এবারে কেরিনা বিবির হাত থেকে ফোঁটা নিলেন। দারুণ উপলব্ধি, অভাবনীয়।
সংস্থার সম্পাদক প্রলয় মজুমদার জানিয়েছেন, এদিন যাঁরা এই ভাইফোঁটায় হাজির হয়েছিলেন তাঁরা কেউ কাউকে চিনতেনই না। অথচ ভাইফোঁটায় অংশ নিয়ে একে অপরের সুখ দুঃখের কতই না কথা বললেন, দিনভর আলোচনা করলেন। প্রলয়বাবুর ছাত্রী অঙ্কিতা সাম জানিয়েছেন, এই ভাইফোঁটা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল দুপুরের খাবারেরও। ভাত, ডাল, মুরগীর মাংস, চাটনি, পাঁপড়, রসগোল্লা এবং ল্যাংচা ছিল দুপুরের মেনুতে। ভাইফোঁটায় বোনেরা দাদা এবং ভাইদের হাতে তুলে দিলেন পাঞ্জাবী এবং পাজামা। ভাই ও দাদারা বোনেদের হাতে তুলে দিলেন শাড়ি।