সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে তবেই অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই বন্ধ হবে, নাহলে কোনদিনই তা সম্ভব নয়। সরকার এক রকম বলবে আর শুধু টাকা তুলবে। আর আমরা ৬০ শতাংশ গাড়ি মালিক যারা সরকারের নির্দেশ মেন চলার চেষ্টা করছি তারা শেষ হয়ে যাবে এটা হতে পারে না। এরকম চলতে থাকলে পশ্চিমবঙ্গে পরিবহণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে হুগলী জেলা কমিটির নেতৃত্বে ট্রাক নিয়ে মহামিছিল করা হল হুগলীর ডানকুনি টোলপ্লাজা থেকে নবাবহাট।
এদিন মিছিলে অংশ নেওয়া ট্রাক মালিকরা জানিয়েছেন, হুগলীর জেলাশাসক সহ পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তাঁরা স্মারকলিপি দিয়ে দ্রুত মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছেন। এদিন ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ এবং হুগলী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রবীর চ্যাটার্জীরা জানিয়েছেন, তাঁরা এই স্মারকলিপিতে ট্রাকে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি পুলিশ, এমভিআই আধিকারিকদের জুলুমবাজি বন্ধেরও দাবি জানানো হয়েছে। আর এই দাবি আদায়েই বৃহস্পতিবার ডানকুনি টোলপ্লাজা থেকে নবাবহাট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ২ নম্বর জাতীয় সড়কে ট্রাক মিছিল করেন মালিকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, গোটা রাজ্যের ৬০ শতাংশ মালিক নিয়ম মেনে পণ্য পরিবহণ করছেন। ৪০ শতাংশ অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই করে পণ্য পরিবহন করছে। তাঁদের দাবি, লোডিং পয়েন্ট থেকেই অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই বন্ধ করতে হবে। পুলিশ, ট্রাফিক, সিভিক, ডাকপার্টি, এমভি-এর জুলুম ও অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। করোনাজনিত কারণে ট্যাক্স মকুব করতে হবে।
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে এদিন জানানো হয়েছে, বহু দেরিতে হলেও সরকার গত ৩০ জুলাই অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই বন্ধের নোটিফিকেশন জারী করেছে। বলা হয়েছে, প্রথমেই কুড়ি হাজার টাকা ও টনপ্রতি দু হাজার টাকা এভাবে তিনবার ফাইন করার পর ট্রাকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে। প্রবীর চ্যাটার্জ্জী জানিয়েছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু শুধু দশগুণ ফাইন বা আইন-বিধিতে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই বন্ধ হবে না। এখনও পর্যন্ত কিছু অসাধু এমভিআই, ট্রাফিক পুলিশ, থানা, ডাক পার্টি, প্যাড পার্টি, লোকেশন পার্টির মাধ্যমে প্রচুর টাকার বিনিময়ে চলছে এই অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, এই রেজিস্ট্রেশন বাতিলের ভয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ ট্রাক মালিক নিজেদের নিয়ম অনুযায়ী লোড করছেন। কিন্তু ৪০ শতাংশ অসাধু ট্রাক মালিক বড় বড় কোম্পানীর নামে অসাধু উপায়ে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই চালাচ্ছেন। আর তাই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইছেন এই পণ্য বোঝাই পয়েন্ট থেকেই অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই বন্ধ করার জন্য। তাঁরা জানিয়েছেন, বেঙ্গল পারমিটের বহু গাড়ইর মালিক কোভিড-১৯ এর জন্য ব্যবসায় মন্দার শিকার হয়েছেন। ঠিকমতন ট্যাক্স দিতে পারেননি। ট্যাক্স না দিলে অ্যাক্সেল লোড চালু করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় বহু গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এদিন ট্রাক মালিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, যে খাদান মালিক ট্রাকে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই দিচ্ছেন এবং যে ড্রাইভার অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই নিয়ে যাচ্ছেন দু’জনেরই ফাইন এবং কড়া শাস্তি চাইছেন তাঁরা। আর তা নাহলে তাঁদের এই ব্যবসা থেকে সরে যেতে হবে। ফলে পশ্চিমবঙ্গে পরিবহণ শিল্প শেষ হয়ে যাবে।