তৃতীয়বারের জন্য মন্ত্রীসভা গঠনের পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, কোথাও কোন অশান্তি, গোলমাল, রাজনৈতিক হিংসা যেন না হয়। জেলায় জেলায় এই নির্দেশ পৌঁছেও গেছে। আর মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এই নির্দেশ আসার পরই বুধবার বর্ধমান ১নং ব্লকের বেলকাশ গ্রাম পঞ্চায়েতের মিলিক পাড়ায় রাজনৈতিক হিংসার ছবি ঘুরে দেখলেন জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা, জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন সহ জেলা ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা। তাঁরা এদিন গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথাও বলেন।

এদিন বেলকাশ গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সদস্য সহদেব মল্লিক জানিয়েছেন, ভোট গণনার পরে ৩মে মিলিকপাড়ায় পাশের গ্রাম থেকে একদল দুষ্কৃতি এসে প্রায় ১২টি দোকানঘর এবং একটি ক্লাবঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে যায়। এমনকি মিলিক পাড়ায় তাঁরা হুঁশিয়ারিও দিয়ে যায়। এই ঘটনায় পর গোটা এলাকার মানুষ রীতিমত আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। আর তাই এদিন জেলাশাসক সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেলেন। সহদেববাবু জানিয়েছেন, এদিন জেলাশাসক তাঁদের আশ্বস্ত করে যান, সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে এই ক্ষতি তাঁরা পূরণ করার চেষ্টা করবেন। গ্রামবাসী অপু মল্লিক, সুকুমার মল্লিক প্রমুখরা জানিয়েছেন, মিলিক পাড়ায় তপশীলি মানুষের বসবাস বেশি। ২ মে ভোট গণনার পরের দিনই পাশের দু-তিনটি গ্রাম থেকে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা এসে একের পর এক দোকানঘর ভাঙচুর করে যান দফায় দফায়। রীতিমত সশস্ত্র অবস্থায় হামলাকারীরা এসেছিলেন। অপু মল্লিক জানিয়েছেন, সম্ভবত আক্রমণকারীরা ভেবেছেন হিন্দু অধ্যুষিত এই মিলিক পাড়ার মানুষ বিজেপিকেই ভোট দিয়েছেন। আর তাই এই সন্ত্রাস চালিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এদিন জেলাশাসক সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা তাঁদের জানিয়ে গেছেন, বৃহস্পতিবার স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে সকল গ্রামবাসীকে নিয়ে তাঁরা একটি মিটিং করবেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ সহ কিভাবে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে এই ক্ষতিপূরণ করা যেতে পারে সেই বিষয় নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন বলে জানিয়ে গেছেন।

অপু মল্লিক জানিয়েছেন, তিনি নিজে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে দোকান করেছিলেন। প্রতিমাসে ব্যাঙ্কের সুদ গুণতে হচ্ছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তিনি কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ব্যাঙ্কের লোকজনও টাকা পরিশোধের জন্য ক্রমাগত চাপ দিচ্ছেন। কার্যত তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। শুধু তিনিই নন, অপু মল্লিক জানিয়েছেন, এখানকার দোকানদারদের অধিকাংশই ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছিলেন। এই ক্ষতি তাঁরা কিভাবে পোষাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। স্বাভাবিকভাবেই বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের মিটিং-এ কি সিদ্ধান্ত উঠে আসে তার দিকেই তাকিয়ে এখন মিলিক পাড়ার বাসিন্দারা।

Like Us On Facebook