বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে এক প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়ালো। মৃত গৃহবধুর নাম রিম্পা তালুকদার। মৃতার স্বামী পঙ্কজ তালুকদার জানিয়েছেন, প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁরা রিম্পাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে নিয়ে আসেন। এরপর সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সিজার করে তাঁর দুটি সন্তান জন্মায়। পঙ্কজবাবু জানিয়েছেন, যথারীতি তাঁরা শুক্রবার রাত্রে রিম্পাকে সুস্থ দেখে যান। এমনকি শনিবার সারাদিন তিনি ভালই ছিলেন। শনিবার রাত্রি প্রায় দশটা নাগাদ তাঁরা রিম্পার সঙ্গে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা অবস্থায় কথা বলে বাড়িও চলে যান। সেই সময় প্রসূতির কাছে ছিলেন রিম্পার মা আলো বণিক এবং মামিমা সাগরী তালুকদার।
আলো বণিক জানিয়েছেন, রাত্রি প্রায় সাড়ে দশটার পর থেকেই রিম্পার পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা কর্তব্যরত নার্সদের জানান। তাঁরা জানান, এরকম যন্ত্রণা হয়। এরপর রাত্রি প্রায় আড়াইটে নাগাদ রিম্পার যন্ত্রণা চরমে ওঠে। ছটফট করতে থাকেন। তাঁরা বারবার নার্স এবং ডাক্তারদের ডাকলেও তারা তাতে কান দেননি। এমনকি নার্সরা সেই সময় মোবাইল ফোনে ব্যস্ত ছিলেন। এদিকে পরিস্থিতি বাড়াবাড়ি হলে রবিবার সকালে প্রসূতিকে অপারেশন থিয়েটার নিয়ে চলে যাওয়া হয়। আর তার কিছুক্ষণ পরই জানিয়ে দেওয়া হয় প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। পঙ্কজবাবুরা অভিযোগ করেছেন, রাত্রিবেলা থেকে যন্ত্রণায় ছটফট করলেও কেউ আসেননি, উল্টে নার্সরা মোবাইল ফোনেই ব্যস্ত থাকায় এবং সম্পূর্ণ চিকিৎসার গাফিলতির জেরেই রিম্পা তালুকদারের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, রবিবার সকালে চিকিৎসার অবহেলায় রিম্পা তালুকদারের মৃত্যুর খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে আসেন আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীরা। তাঁরা ওই নার্সদের সঙ্গে কথা বলার দাবি জানাতে থাকেন। এই এঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। আসেন হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডা. অমিতাভ সাহাও। তিনি রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। পঙ্কজ তালুকদার এদিন নার্স ও চিকিৎসকদের গাফিলতি এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। এদিনই বর্ধমান থানা এবং জেলা পুলিশ সুপারের কাছেও নার্স ও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এব্যাপারে এদিন ডেপুটি সুপার ডা. অমিতাভ সাহা জানিয়েছেন, চিকিৎসার গাফিলতির বিষয়ে রোগীপক্ষের লোকজন একটি অভিযোগ দিয়েছেন। তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।