অজয়ে মাছ ধরতে গিয়ে মিলল আড়াই ফুট লম্বা ও দেড় ফুট চওড়া কালো পাথরের বিষ্ণুমূর্তি। সোমবার ভোরে মূর্তিটি পাওয়া যায় মঙ্গলকোটের খেঁড়ুয়া গ্রামে। স্থানীয়দের দাবি, অজয়ের পাড় ভাঙতে শুরু করলেই নানান প্রাচীন মূর্তি পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে একই জায়গা থেকে অন্তত ১২টি মূর্তি পাওয়া গেছে। বিষ্ণুমূর্তি ছাড়াও গণেশমূর্তি, যক্ষমূর্তিও মিলেছিল, যেগুলি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী ও বেহালায় রাজ্যের প্রত্নশালায় ঠাঁই পেয়েছে।
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রাক্তন মহা নির্দেশক গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, ‘বারবার কেন একই জায়গা থেকে মূর্তি মিলছে তার অনুসন্ধান করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে আমার ধারণা, মঙ্গলকোটের ওই জায়গা থেকে মূর্তি তৈরি করা হতো কিংবা মূর্তিগুলি রাখা থাকত।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ১৯৮৬ সালে অজয় নদ থেকে প্রথম মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল। ২০০১ সালে যক্ষমূর্তি পাওয়া যায়। ২০১৫ সাল থেকে টানা মূর্তি মিলছে। বেশ কিছু মূর্তির পুজো করছেন স্থানীয়রা। এমনকী বালি খননের সঙ্গে মূর্তিও উঠেছে বলে তাঁদের ধারণা। ওই গ্রামের বাসিন্দা শ্রীজীব গোস্বামী, দেবকুমার ধারাদের দাবি, এ ধরণের প্রাচীন মূর্তির গুরুত্ব অপরিসীম। প্রশাসন মূর্তিগুলি সংরক্ষণ করুক, একই সঙ্গে এক জায়গা থেকে বারবার মূর্তি মিলছে কেন, তার ইতিহাসটাও জানা দরকার।
পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘মঙ্গলকোট থানায় মূর্তিটি উদ্ধার করে আনা হবে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণকেও জানানো হবে।’ পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, আদি-মধ্য যুগের কষ্টিপাথরের মূর্তিটি ‘ত্রিবিক্রম’। প্রচলিত মূর্তি। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কিউরেটর রঙ্গন জানার দাবি, ওই এলাকা থেকে অনেক মূর্তি পাওয়া গেছে। বর্ধিষ্ণু এলাকা ছিল বলেই মনে হয়। কাটোয়ার ক্ষেত্র-সমীক্ষক স্বপন ঠাকুরের দাবি, ত্রিবিক্রম মূর্তি বণিক সম্প্রদায়ের মানুষেরাই পুজো করতেন। বন্যা বা নানা কারণে তাঁরা সম্ভবত কোনও পুকুরে একসঙ্গে মূর্তিগুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। কালের নিয়মে ওই পুকুর অজয়ের গর্ভে চলে গিয়েছিল। জল কমতেই মূর্তিগুলি উদ্ধার হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা জলধর ধীবর, সন্ন্যাসী ধীবরদের দাবি, একটা সময় পাড় ভাঙা কম ছিল, তখন মূর্তি পাওয়া যায়নি। ২০১৫ সালের পর থেকে পাড় ভাঙতেই অজয়ের জল থেকে মূর্তি মিলেছে। বেশ কয়েকটি বড় মূর্তি পাওয়া গেছে।