প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার পাশাপাশি প্রতিকূল পরিবেশের মাঝেই এবার পা দিয়ে লিখে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে মেমারির সিমলা আদিবাসীপাড়ার বাসিন্দা জগন্নাথ মাণ্ডি। এই আদিবাসী পাড়া থেকে জগন্নাথই একমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। নুদিপুর ভুপেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের মাধ্যমিকের ছাত্র জগন্নাথ মাণ্ডির দুটি হাতই প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ। হাতের বদলে পা দিয়েই সে লেখালেখি করে। মাধ্যমিকে তার সিট পড়েছে বাগিলা পূর্ণচন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরে।

জগন্নাথ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত তার সব পরীক্ষাই ভাল হয়েছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন তার মত যারা আছে তাদের উদ্দেশ্যে জগন্নাথ বলে, ‘আমার মত যারা আছে তাঁরা যেন ভালো করে পড়াশুনা করে। পড়াশোনা চালিয়ে যায়।’ জগন্নাথ জানিয়েছে, তার স্বপ্ন শিক্ষক হওয়া। আর এই শিক্ষক হয়ে তার মত পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে চায় সে।

জগন্নাথের প্রতিবেশী এবং সাঁতরা পাড়ার বাসিন্দা সুভাষ সাঁতরা জানিয়েছেন, জগন্নাথ নিজের মনের জোরে পড়াশোনা করছে। পাড়ায় ওই একমাত্র মাধ্যমিক দিচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, জগন্নাথদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। জমি জায়গা নেই। বাবা এবং মা দু’জনেই আলাদাভাবে ছেড়ে চলে গেছে। এখন প্রায় ৯০ বছরের ঠাকুমার কাছে থাকে জগন্নাথ। এক দাদা অন্য জায়গায় কাজ করে, সে কিছু খরচ দেয়। সেই খরচ দিয়েই কোনরকমে পড়াশোনা করছে জগন্নাথ। সুভাষবাবু জানিয়েছেন, যে কদিন পরীক্ষা হবে তিনিই জগন্নাথকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিয়েছেন। জগন্নাথ জানিয়েছে, গড়ে প্রতিদিন চারঘন্টা পড়াশোনা করেছে। ছিল একজনমাত্র প্রাইভেট টিউটর। যদিও সে জানিয়েছে, স্কুলের শিক্ষকরা তাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছেন।

পরীক্ষাকেন্দ্র বাগিলা পূর্ণচন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনন্যা তরফদার জানিয়েছেন, পা দিয়ে জগন্নাথ এত সুন্দর করে লিখছে প্রত্যেকের ভাল লাগছে। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে এর থেকে অন্যান্যরা অনুপ্রাণিত হবে। পায়ের লেখাও অতি সুন্দর, এবং গুছিয়ে লিখছে। যদিও কী লিখছে সেটা এখন আমাদের দেখার বিষয় নয়। তবে গুছিয়ে লিখছে এটা বোঝা যাচ্ছে। এখন বাকি পরীক্ষার পাশাপাশি জগন্নাথের পরীক্ষার ফলাফলের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা পাড়ার লোকজন।

Like Us On Facebook