আধ ঘন্টার কালবৈশাখী-তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল বর্ধমান শহর-সহ জেলার একাংশ। দেওয়াল চাপা পড়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৮ জন। রমনাবাগানে গাছ চাপা পড়ে দু’টি সম্বর হরিণের মৃত্যু হয়েছে। গোটা শহর তো বটেই জেলার বিভিন্ন রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ে থাকায় ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ঝড় শেষ হওয়ার পরেই জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পাঁচটি গাড়ি গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কার করতে বেরিয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ দফতরের সবস্তরের অফিসাররা একসঙ্গে কাজ শুরু করেছেন। আবহাওয়া দফতর সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী জেলায় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৭০-৮০ কিমি।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘ঝড়-পরবর্তী বিস্তারিত রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে।’ সব মিলিয়ে আধ ঘন্টারও বেশি কালবৈশাখী স্থায়ী ছিল। তারমধ্যেই বর্ধমান শহরে কয়েক’শো গাছ ভেঙে পড়েছে। হাজার খানেকরও বেশি গাছের ডাল ভেঙেছে। শহরের গোলাপবাগ, পুলিশ লাইন-সহ বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল দীর্ঘক্ষণ বন্ধ ছিল। বিপর্যয় মোকাবিলা দল গিয়ে গাছ সরানোর পরে রাতের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বর্ধমান পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, শহরের তারামণ্ডলের কাছে দু’টি গাছ পড়ে গিয়ে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। পুলিশ লাইনে বিজ্ঞাপনের তোরণ পড়ে গিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়াও বাদামতলা, শাঁখারিপুকুর, সাধনপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়েছে। পূর্ত ভবনে একটি বড় গাছ উপড়ে পড়ায় সরকারি আধিকারিকদের বেশ কয়েকটি গাড়ি ক্ষতির মুখে পড়েছে। রমনাবাগানও বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। গাছ পড়ে দু’টি সম্বর হরিণ মারা গিয়েছে। পশুপাখিদের বেশ কয়েকটি খাঁচা নষ্ট হয়ে গেছে। জেলার বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, ‘দু’টি সম্বর মারা গেছে। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করছি।’
কালবৈশাখীর জেরে বর্ধমান স্টেশনে ভেঙে পড়ে জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড। কয়েক বছর আগে সুউচ্চ স্ট্যান্ড তৈরি করে পতাকা লাগানো হয়েছিল। ঝড়ে ওই স্ট্যান্ড ভেঙে পড়া ছাড়াও কয়েকটি গাছও ভেঙেছে। শহরের জিটি রোডের উপর থাকা বাঁশের অস্থায়ী তোরণগুলি ভেঙে গিয়েছে। শহর জুড়ে লাগানো অনেক বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং ঝড়ে উড়ে গেছে।
রায়না ১ ব্লকের নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের কুকুরা গ্রামে ঝড়ের সময় ঘরের ভিতর আশ্রয় নিয়েছিলেন সাবিত্রী কুণ্ডু (৭৮)। কিন্তু খড়ের চাল আর দেওয়াল গাঁথনি ভেঙে তাঁর উপর পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই বৃদ্ধা। তাঁর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্যে বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। রায়না ২ ব্লকের বড়বৈনান গ্রামে মাঠের ধারে একটি বাড়ির অ্যাসবেস্টস চাপা পড়ে চারজন জখম হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ঝড়-বৃষ্টি দেখে গরু চরানোর সময় এক ব্যক্তি ওই বাড়িতে আশ্রয় নিলে তিনিও জখম হয়েছেন। তাঁদেরকে রায়নার ব্লক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে পাঠানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জামালপুরের মেমারি-তারকেশ্বর রোডে একাধিক গাছ পড়ে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। ব্লক হাসপাতালে গাছ পড়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ক্ষতি হয়েছে। শুধু মাত্র জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতেই ২৬টি গাছ পড়েছে। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গেছে, ৪৬টি সাবস্টেশনের মধ্যে প্রথমেই ৩০টি সাবস্টেশন ঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়ে। এ ছাড়াও প্রচুর সংখ্যক ট্রান্সফর্মার নষ্ট হয়েছে, বিদ্যুতের খুঁটি উড়ে গেছে। বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার বর্ধমানের আঞ্চলিক ম্যানেজার রাজু মণ্ডল বলেন, ‘প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ধীরে ধীরে সাবস্টেশনগুলিকে স্বাভাবিক করে তোলা হচ্ছে।’