মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারী কিংবা সিবিএসই বা আইসিএসই পরীক্ষার কোন ফলাফল ঘোষণা নয়, এ একেবারেই নজীরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা বাংলা। প্রাথমিক স্কুলে চাকরীর যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারীর বাড়িতে এই প্রথম ঝলসে উঠল ক্যামেরার ফ্লাশ। গোটা রাজ্যে টেট পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করলেন বর্ধমানের আলমগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ইনা সিংহ। ১৫০-র মধ্যে তিনি পেয়েছেন ১৩৩। গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষা হয়। মোট ৬ লক্ষ ২০ হাজার পরীক্ষার্থী ছিলেন। আবেদন করেছিলেন প্রায় ৬ লক্ষ ৯০ হাজার জন। প্রায় দেড়লক্ষ পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় পাশ করেছেন। যার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করলেন বর্ধমানের ইনা সিংহ। শুক্রবার দুপুরে তাঁর এই প্রথম হওয়ার খবর পেয়েই গোটা সিংহ পরিবারে খুশির হাওয়া। মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষায় টপারদের মতই এক্ষেত্রেও পাড়াপ্রতিবেশীরাও ছুটে এসেছেন ইনাকে শুভেচ্ছা জানাতে।

এদিন তাঁর এই প্রথম হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ইনা সিংহ জানিয়েছেন, আজ অনেকের চাকরি গেছে, আবার অনেকে চাকরির জন্য রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন। সেটা তাঁদের দৃষ্টিকোণ। আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি, আমি পরিশ্রম করেছি, ফল পেয়েছি। ২০২১ থেকে আমি সেন্ট্রাল টেট দিচ্ছি। ওখানেও আমি ভাল ফল করেছিলাম। ১৩১ পেয়েছিলাম। ৮৭ শতাংশ। যিনি প্রথম হয়েছিলেন তিনি ১৩৯ পেয়েছিলেন। সেখানেও ন্যাশানাল র‍্যাংক ছিল। কিন্তু এগুলো ছিল মানদণ্ড রেফারেন্স টেস্ট। তাই এগুলো ধরা হয়না। সি-টেট দু’বার দিয়েছি। ইনা জানিয়েছেন, রাজ্যের টেট এবারই প্রথম দিয়েছি। প্রায় একই র‍্যাঙ্ক হয়েছে। তাঁর এই সাফল্যে বেজায় খুশী ইনা বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নিজে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি তেমন কোনও কোচিং সেন্টার বা টিচার নিইনি।’ টেটের এই সাফল্য সম্পর্কে তাঁর টিপস্ পূর্ববর্তী বছরগুলোকে ফলো করতে হবে। কমপক্ষে ৫ বছর প্রশ্নের সমাধান করুন। ইনা জানিয়েছেন ভাল ফলের আশা করেছিলাম। তবে ১৫০-তে ১৩৩ আশা করিনি। ১৩০-এর আশেপাশে আশা করেছিলাম। আমার পরিশ্রম সফল হয়েছে। কোনোদিন ২ ঘণ্টা কোনোদিন ১০ ঘণ্টা পড়াশুনাও পড়েছি। কোচিং সেন্টার-এ পড়িনি। নিজেই পড়েছি।

ইংরেজীতে অনার্স নিয়ে পাশ করা ইনা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে পাস করার পর থেকেই প্রস্তুতি শুরু করি। মাধ্যমিক পাশ করেন ২০০৮ সালে ৭৯.২৫ শতাংশ পেয়ে। ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ৭২.২০ শতাংশ। ডিএলএড দেন ২০২০ সালে। এদিকে, টেটে রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করলেও তা নিয়ে বিরাট কিছু আবেগে ভাসতে রাজী নন ইনা। এদিন আলমগঞ্জের বাড়িতে ইনা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক পদে চাকরীর জন্য কে বি এস-এর পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যেই জাতীয় পর্যায়ের এই পরীক্ষা হবে। তাই তার প্রস্তুতি চলছে। ইনার অভিমত, ধৈর্য্য ধরে লড়াই চালালে সফলতা আসবেই।

অন্যদিকে, মেয়ের এই সাফল্যে বেজায় খুশী ইনার মা কাকলী সিংহ। তিনি জানিয়েছেন, খুব ভাল লাগছে। খুব আনন্দ হচ্ছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টাই পড়াশোনা নিয়ে থাকে। ৫ টা টিউশনি পড়াতো, নিজে পড়ার জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল। একটা টিউশন পড়াতো। তিনি জানিয়েছেন, আমাদের তিনটে দোকানের ভাড়া থেকে সংসার চলে। ইনার বাবা অসুস্থ, কিছু করেন না। ইনার বাবা দেবাশীষ সিংহ জেনারেটর ব্যবসায়ী। একটি দুর্ঘটনার পর আর কাজ করতে পারেন না। পঞ্চম শ্রেণী থেকেই ইনা একজন শিক্ষক নিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছে।

Like Us On Facebook