বিক্ষিপ্ত কয়েকটি তৃণমূল-বিজেপি মারপিট, ইভিএম মেশিন খারাপের পাশাপাশি ব্যাপক হারে শাসকদলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট এবং অবশ্যই দাপিয়ে ভোট করার অভিযোগকে ঘিরে সোমবার চতুর্থ দফার সপ্তদশ লোকসভার নির্বাচন পর্ব কাটল নির্বিঘ্নেই। সোমবার সকাল থেকে ভোটের জন্য কার্যত ভোর থেকেই বুথে বুথে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভোটাররা। তীব্র গরমের মাঝেও সকাল থেকে দুপুরের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন বুথে কমবেশী ভোটারদের লাইন দেখা গেলেও দুপুরের দিকে বহু বুথেই দেখা মেলেনি ভোটারদের।
পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান-দুর্গাপুর এবং বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের পাশাপাশি বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট এবং কেতুগ্রামেও বহু বুথে ইভিএম মেশিন খারাপ থাকায় সকাল থেকে ভোটগ্রহণের কাজ শুরু হতে বেশ কিছুটা দেরী হয়ে যায়। এরই মাঝে গলসি স্টেশন এলাকায় এক বিজেপি কর্মীকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল সমর্থকরা ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল তার প্রতিবাদ করাতেই মারধর করা হয়েছে। অন্যদিকে বিজেপির দিকে একই অভিযোগ করেছে তৃণমূল।
আউশগ্রামের বোলপুর লোকসভার ভেদিয়ায় তৃণমূল সমর্থকদের হামলায় সঞ্জু মাঝি নামে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফাটে বলে অভিযোগ। ভেদিয়ার সাঁতলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৭নম্বর বুথের এই ঘটনার পাশাপাশি আউশগ্রামের উক্তা গ্রামে ৬৬ নম্বর বুথে মেটে পাড়াতে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগে ৩০০ জন গ্রামবাসী ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ।
বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের মেমারিতে ২৩২ নং বুথের তৃণমূল পার্টি অফিসে ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। দলীয় পতাকা নিয়ে ওই অফিসে ঢুকে বিজেপি কর্মীরা ভাঙচুর চালায় ও কর্মীদের মারধর করে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা। এরই পাশাপাশি গোটা জেলা জুড়েই বিভিন্ন বুথে বুথে বেপরোয়া ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। জামালপুরের শালমূলায় রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করেন গ্রামবাসীরা। ৭৪০ জন ভোটারদের মধ্যে একজনও এদিন ভোট দেননি।
যদিও জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, গোটা জেলা জুড়েই এদিন শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কিছু কিছু অভিযোগ এসেছিল, দ্রুত তা মেটানো হয়েছে। একইসঙ্গে বেশ কিছু অভিযোগের কোন ভিত্তি পাওয়া যায়নি। বিকাল ৫টা পর্যন্ত বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনে ভোট পড়েছে ৮১ শতাংশ এবং বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে ভোট পড়েছে ৮৩ শতাংশ।
সিপিএমের বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, এদিন সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে সিপিএমের এজেণ্টদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে বেপরোয়া ছাপ্পা ভোট দিয়েছে শাসকদল। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের কংগ্রেস প্রার্থী রণজিত মুখোপাধ্যায় এবং বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী সিদ্ধার্থ মজুমদার উভয়েই জানিয়েছেন, বহু জায়গায় কংগ্রেসের এজেণ্টদের মারধর করে বুথ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, বেশ কিছু জায়গায় বিজেপি সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করলেও সাধারণ মানুষ তা প্রতিহত করে নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছে। মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী জানিয়েছেন, গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রায় ৩৫০-রও বেশি বুথ থেকে বিজেপির এজেণ্টদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপক সন্ত্রাস চালানো হয়েছে বিজেপি সমর্থক থেকে সাধারণ ভোটারদের ওপর। তাঁদের বেশ কয়েকটি জায়গায় কর্মীদের মারধর করা হয়েছে।
বর্ধমান ডট কম-এর খবর নিয়মিত আপনার ফেসবুকে দেখতে চান?