গানের গলা অসাধারণ। একেবারে যেন সরস্বতীর বরপুত্র। যার জেরে মাত্র ৯ বছর বয়সেই নজর কেড়েছে বিস্ময় এই বালক। তার গানের সুরেই ঘুম ভাঙে প্রতিবেশীদের। বর্ধমান শহর থেকে ১৫ কিমি দুরে বড়শুলের বালিমাঠ এলাকা। আলপথ বেয়ে গ্রামের এক প্রান্তে বাড়ি অভিষেকের। মানে অভিষেক সানার।
মাত্র আড়াই বছর বয়সেই মা তাকে ও তার ছোট ভাইকে ছেড়ে চলে যায় অন্যত্র। ছোট দুই ছেলেকে অনেক কষ্টে বড় করে তুলছেন বাবা তারক সানা। বড় ছেলের যখন তিন বছর বয়স তখনই তারকবাবু লক্ষ্য করেন ছেলের গানের গলা অসাধারণ। তার যেটুকু গানের শিক্ষা ছিল তাই দিয়ে গান শেখাতে শুরু করেন অভিষেককে। পরবর্তীতে ছেলের জন্য গানের মাস্টারও রাখেন কিন্তু তা বেশীদিন সম্ভব হয় নি। দিনমজুর বাবার পক্ষে সংসারের ৫ সদস্যের পেট ভরিয়ে ছেলের গানের মাস্টার রাখার অর্থনৈতিক সামর্থ ছিল না। কিন্তু তাতেও অভিষেকের গানের প্রতি টান এতটুকুও কমেনি। নিজের অদম্য জেদ ও চেষ্টায় আজ সে এক বিস্ময় বালক। যার গানের টানে প্রতিদিনই দূরদুরান্তে থেকে ভিড় জমাচ্ছেন গানপ্রেমীরা।
কিন্তু অভিষেকের এই লড়াই সহজ নয়। তার একমাত্র আশ্রয়স্থলের ভঙ্গুর দশা। যেকোন মূহুর্তে ভেঙে পড়তে পারে সেই আশ্রয়স্থল। ঝড় বৃষ্টিতে ভয়কে সম্বল করেই দিনযাপন। নেই সামান্য বিদ্যুৎ সংযোগ টুকুও। কেরসিনের লম্ফ ও হ্যারিকেনের আলো্য চলে পড়াশোনা ও গানের তালিম।কিন্তু এই কঠিন লড়াইয়েও হার মানতে রাজি নয় অভিষেক। ভবিষ্যতে একজন বড়মাপের শিল্পী হতে চায় অভিষেক। চায় বড় স্টুডিওয় তার গান রেকর্ড করতে। বড়শিল্পী হয়ে সে তার বাবার দুঃখ দূর করতে চায়। চায় একটি বাড়ি তৈরি করতে। যে বাড়িতে থাকবে বৈদ্যুতিক সংযোগ। বহু আবেদন নিবেদন করে নিজভূমি নিজগৃহ প্রকল্পে জায়গা মিললেও মেলেনি ঘর। মেলেনি রাস্তা। মেলেনি বিদ্যুৎ। তাই বড় হয়ে বড় শিল্পী হয়ে এলাকার রাস্তাঘাট ঠিক করতে চায় অভিষেক। চায় এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ আনতে। ছেলের এই প্রতিভা যাতে নষ্ট না হয়ে যায় তার জন্য সকলের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান অভিষেকের বাবা তারক সানা। তিনি চান সকলের সহযোগিতায় অভিষেক প্রতিষ্ঠিত হোক। অভিষেক মুখ উজ্বল করুক তার পরিবার ও পূর্ব বর্ধমান জেলার।