বর্ধমান থানার সিমডালে বাপের বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ মৃতার স্বামী ও শ্বশুর সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। অভিযোগ, বিয়ের প্রতিশ্রুতি মত পণের বকেয়া টাকা দিতে না পারায় লাগাতার অসম্মান, হুমকির জেরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতি হয়েছেন এম এ উত্তীর্ণা জিন্নাতুন ফিরদৌস (২৩)। আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া এবং গৃহবধুর ওপরে অত্যাচারের অভিযোগে পুলিশ মৃতের স্বামী পেশায় মুদির দোকানদার মনসুর আলি, শ্বশুর এবং খুড়শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করেছে। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।

মৃত গৃহবধুর মামা মোল্লা মণিরুল আলম বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন মৃতের শ্বশুরবাড়ির ৮ জনের বিরুদ্ধে। তিনি জানিয়েছেন, বাবা-মার একমাত্র সন্তান জিন্নাতুন ফিরদৌস ওরফে দীপাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন দীপার বাবা সুফি মকবুল হোসেন। প্রায় ১ বছর ৪ মাস আগে পাশের তালিত গ্রামের বাসিন্দা মনসুর আলি ওরফে কাজলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়েতে নগদ ১ লক্ষ টাকা, ২০ ভরি সোনা এবং লক্ষাধিক টাকার আসবাবপত্র দাবি করে পাত্র পক্ষ। পণ হিসাবে ৮০ হাজার টাকা নগদ এবং ১৫ ভরি সোনার গহনা সহ আসবাব পত্র দেন মেয়ের বাবা।

মোল্লা মণিরুল আলম জানিয়েছেন, কিন্তু বিয়ের পর থেকেই বকেয়া নগদ অর্থ এবং সোনার গহনার চাপ দিতে থাকে দীপার ওপর। এজন্য তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালাতে থাকে। বর্তমানে দীপা প্রায় ৮ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, এভাবে অত্যাচার চলতে থাকার মাঝেই দীপাকে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাঁর সমস্ত স্ত্রী ধন কেড়ে নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। দীপা চলে আসেন বাপের বাড়ি। বকেয়া পণ না দিলে দীপাকে তালাক দেবারও হুমকি দেন। মণিরুলবাবু জানিয়েছেন, এই অবস্থা চলার মাঝেই গত ১ জুলাই দীপার স্বামী ও শ্বশুর দীপাদের বাড়িতে আসেন এবং সেদিনও তাঁরা রীতিমত হুমকি দিয়ে বকেয়া পণের দাবিতে অটল থাকেন। এমনকি দীপাকে দিয়ে জোর করে তালাকনামায় সই করানোর জন্যও চেষ্টা করা হয়।

মণিরুলবাবু আরও জানিয়েছেন, এই সময় দীপার স্বামী ও শ্বশুর সকলের সামনে ৮ মাসের গর্ভবতী দীপাকে নানা কটু কথা বলেন। দীপা বাবা-মার সম্মানের কথা ভেবে দুদিনের মধ্যে বকেয়া পণ দেবার কথা বলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ফেরত পাঠান। কিন্তু এই ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন দীপা। তারপরই সোমবার সকালে তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মৃত্যু হয় তাঁর। এইঘটনায় গ্রামের মানুষজন মৃতার শ্বশুরবাড়ির তিনজনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরপরই মণিরুলবাবু বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

Like Us On Facebook