দীর্ঘ বার্ধক্যজনিত রোগভোগের পর শুক্রবার সকাল ৭টা ১০ মিনিট নাগাদ মারা গেলেন সিপিএমের প্রবীণ নেতা মদন ঘোষ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেলেন তাঁর স্ত্রী ও এক কন্যা, জামাতা এবং এক নাতনিকে। শুক্রবার সকালে বর্ধমান শহরের ভাতছালায় নিজের বাড়িতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থতা সত্ত্বেও গত ১৯ এপ্রিল তিনি পশ্চিম বর্ধমান জেলার খান্দরায় রবীন সেন জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠানে কমরেড সেনের স্মৃতিচারণ করেন। মদন ঘোষ ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৫৯ সালে পার্টি সদস্যপদ পান। বিপিএসএফ-এর বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। মদন ঘোষের বাবা অনাথবন্ধু ঘোষ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরাও কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে সিপিআই দলের ভাতাড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ডাঃ অনাথবন্ধু ঘোষ বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে মদন ঘোষ সিপিআই (এম)-এর সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে তিনি পার্টির বর্ধমান জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক। ১৯৯২ সালে শিলিগুড়ি সম্মেলন থেকে পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন ২০০২ সালে। ২০০৮ সালে কোয়েম্বাটুরে পার্টির উনবিংশতিতম পার্টি কংগ্রেস থেকে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন৷ এছাড়াও মদন ঘোষ সারা ভারত কৃষকসভার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতি, সর্বভারতীয় খেতমজুর ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হিসাবেও তিনি কাজ করেছেন। ছিলেন ১৯৯১-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি। একাধিক প্রতিষ্ঠান তৈরীর পাশাপাশি মদন ঘোষের সভাধিপতি থাকাকালীন বর্ধমান ‘সংস্কৃতি’ লোকমঞ্চ তৈরী হয়। তাঁর নেতৃত্বেই সিপিএম পার্টির শিক্ষা কেন্দ্র মটর-বিনয় ট্রাস্ট গড়ে ওঠে।

এদিন মদন ঘোষের মৃতদেহ বর্ধমানের সিপিএমের জেলা অফিসে নিয়ে আসার পর দলীয় নেতা-কর্মীরা শেষ শ্রদ্ধা জানান। উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, রবীন দেব, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, আভাষ রায় চৌধুরী, অমল হালদার, সৈয়দ হোসেন, শতরূপ ঘোষ, মীনাক্ষী মুখার্জী প্রমুখ। এছাড়াও এদিন রাজনৈতিক সৌজন্যের নজীর গড়ে সিপিএমের জেলা অফিসে মদন ঘোষের মৃতদেহে মাল্যদান করেন বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিত তা। এদিন বর্ধমানের পার্কাস রোডের সিপিএমের জেলা অফিস থেকে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজে। চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রয়োজনে মদন ঘোষ দেহদান করে গিয়েছিলেন। এদিন তাঁর মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজের হাতে।

Like Us On Facebook