মাঝে আটটা বছর কেটে গেছে, কিন্তু খাগড়াগড় ‘খাগড়াগড়ে’ই রয়ে গেছে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর, অষ্টমীর দুপুরে খাগড়াগড়েরই বাসিন্দা নূরুল হাসান চৌধুরির একটি বাড়ির দোতলায় বিস্ফোরণ হয়। দু’জন মারা যান। পরে জানা যায়, কাপড় তৈরির নাম করে বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে আইইডি বানানোর কাজ চলছিল। এই ঘটনার আট বছর পরে ফের চর্চায় খাগড়াগড়। এ বারেও সেই ভাড়াটে। আগের সেই বাড়ি থেকে ২০০ মিটার মতো দূরে খাগড়াগড়েরই পূর্ব মাঠ পাড়ার সিরাজুল ইসলামের বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন বর্ধমান শহরের লোকো মোড়ের গোপাল সিংহ। খেতিয়ার বাসিন্দা মমতাজ খাতুনের পরিচয় দিয়ে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাড়াটেদের তথ্য বর্ধমান থানায় জানানোর জন্য পুলিশ মাঝেমধ্যেই খাগড়াগড়-সহ বেশ কিছু জায়গায় প্রচার করে। তারপরেও কিছু বাড়ির মালিকদের কোনও হুঁশ নেই। বাড়ি ভাড়া দিয়ে ভুক্তভোগী নূরুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আমি সবাইকে বলি, ঠিকমতো নথি দেখে, পুলিশের পরামর্শ মেনে লোক চিনে তবেই ভাড়া দেবেন। তা না হলে আমার মতো অহেতুক আইনের জটিলতায় পড়ে যাবেন।’ দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ-র কাছ থেকে তিনি বাড়িটি ফিরে পেয়েছেন। খাগড়াগড় পূর্ব মাঠপাড়ার বাসিন্দা জেসমিন বেগম, সিন্ধিয়া হক থেকে মহিমা বিবি, ফাজিলা বিবিদের দাবি, ভাড়াটিয়াদের জন্য খাগড়াগড়ের বদনাম হচ্ছে। অথচ সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত বাড়ির মালিকদের একাংশের মধ্যে কোনও হুঁশ নেই। পরিচয়পত্রে খাগড়াগড়ের নাম দেখলেই বিয়ে-শাদি থেকে বাইরে কাজ করতে গিয়েও নানা রকম প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। পুলিশের দাবি, খাগড়াগড়ে বেশিরভাগ বাড়িতেই ভাড়াটিয়া রয়েছে। পরিবার নিয়ে যেমন অনেকে ভাড়া রয়েছেন, তেমনই মেস করেও ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অনেক ভাড়াটিয়া সম্পর্কে থানায় কোনও নথি নেই।

পুলিশ সুপার (পূর্ব বর্ধমান) কামনাশিস সেন বলেন, ‘ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে আমরা আরও কঠোর হচ্ছি। ভাড়াটিয়াদের নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু করা হবে। ভাড়াটিয়ারা বেআইনি কাজ করলে বাড়ির মালিক তাঁর দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না।’ বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে খাগড়াগড়ের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভাড়াটিয়া-সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। শুধু খাগড়াগড় নয়, একই সঙ্গে পাশের কৃষ্ণপুর, সরাইটিকর, লক্ষ্মীপুর মাঠ, বাদশাহী রোডেরও বাড়িগুলি থেকে ভাড়াটিয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। শুধুমাত্র খাগড়াগড়েই ৫০টির মতো সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্ধমান থানা ও বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা (বিডিএ)। এ ছাড়াও শহরজুড়ে ভাড়াটিয়া-তথ্য বর্ধমান থানায় জমা দেওয়ার জন্যে প্রচারের উপরেও জোর দিতে চলেছে পুলিশ।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভাড়াটিয়ার সঙ্গে বাড়ির মালিকের চুক্তি থাকা বাধ্যতামূলক। সেই চুক্তি-সহ ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিকের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড থানায় জমা দিতে হবে। থানা থেকে একটি নির্দিষ্ট ফর্ম দেবে। সেই তথ্য পূরণ করতে হবে। পুলিশ ভাড়াটিয়ার ঠিকানা দেখে সেখানকার সংশ্লিষ্ট থানায় তাঁর সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তবে বাড়ির মালিককে ভাড়া দিতে অনুমতি দিয়ে থাকে। সে জন্যে বাড়ির মালিককে থানা থেকে একটি নথিও দেয়। বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গেছে, এই কাজটি দেখার জন্যে একটি ‘সেল’ও তৈরি করা হয়েছে। বারবার প্রচারের পরেও বাড়ির মালিকদের একটা বড় অংশ থানায় নথি জমা দেওয়ার ব্যাপারে ‘বিমুখ’। সে কারণেই বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, জাল নোট কাণ্ডে গ্রেফতার বর্ধমানের গোপাল সিংহকে শনিবার দুপুরে তাঁর ভাড়া বাড়ি খাগড়াগড়ের পূর্ব মাঠ পাড়ার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালায়। পুলিশ সেখান থেকে বেশ কিছু তথ্য উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে। প্রায় দু’ঘন্টা ধরে ওই বাড়িতে তল্লাশি চালান ডিএসপি (হেড কোয়ার্টার) অতনু ঘোষাল, আইসি (বর্ধমান থানা) সুখময় চক্রবর্তীরা।

Like Us On Facebook