বর্ধমান শহরকে বাঁচাতে তথা এই শহরের বুক চিরে যাওয়া বাঁকা নদীকে বাঁচাতে কি কি ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে রবিবার নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হল বর্ধমানের টাউন হল ময়দানে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ এবং বর্ধমান পৌরসভার উদ্যোগে এই নাগরিক সভায় শহরকে বাঁচাতে এবং প্রায় ১২৫ কিমি এই বাঁকা নদীকে বাঁচাতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিই এদিন জোড়ালো হয়ে উঠল। এই সভায় এদিন উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান পৌরসভার পুরপ্রধান পরেশচন্দ্র সরকার, বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিরাও।

এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সভাপতি ডা. তুষারকান্তি বটব্যাল জানিয়েছেন, বাঁকা নদী বর্ধমান শহরের জায়গায় জায়গায় অবৈধ দখলের দায়ে বাঁকা নালায় পরিণত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, গলসির রামগোপালপুর থেকে উৎপন্ন এই বাঁকা নদী কালনা মহকুমার সমুদ্রগড়ে গিয়ে ভাগীরথীতে মিশেছে। এই নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১২৫ কিমি। যার মধ্যে বর্ধমান শহর ও সংলগ্ন এলাকার মধ্য দিয়েই রয়েছে প্রায় ৩৫ কিমি। তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই এই বাঁকা নদীকে দূষণের নদীতে পরিণত করা হয়েছে। অবিলম্বে এই বাঁকাকে তার পুরানো অবস্থায় ফিরিয়ে না দিলে যে কোনো মূহূর্তেই বর্ধমান শহরের বুকে বিপর্যয় ঘনিয়ে আসবে। তিনি জানিয়েছেন, বাঁকা নদীর জলকে সারা বছর প্রবাহিত করার জন্য যেমন ব্যবস্থা নিতে হবে তেমনই নদীকে দূষণ মুক্ত করে মাছ চাষ, পরিবহণ ব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, এই নদীকে বাঁচাতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে যুক্ত করতে হবে।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপিকা গোপা সামন্ত বলেন, আলাদা করে সৌন্দর্য্যায়ন নয়, বাঁকাকে পরিষ্কার রাখলেই এবং তার হৃত গৌরব ফিরিয়ে দিলেই সৌন্দর্য্যায়নের কাজ হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, বাঁকার দু-ধারে থাকা বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকেও এই কাজে যুক্ত করতে হবে। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সারা বছর জলের যোগান এবং তার সঙ্গে নদীর অস্তিত্বকে ফিরিয়ে দিতে নদীতে মাছ সহ অন্যান্য বিষয়কে যুক্ত করতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, একইসঙ্গে দূষণ রোধে পর্যাপ্ত ভূমিকা নিতে সকলকে আন্তরিক হতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, বাঁকা নদীর পাড় দখল করে নদীকে ছোট করে দেওয়া হয়েছে। এব্যাপারে রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এদিন পুরপ্রধান পরেশচন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, এদিনের আলোচনার বিষয়বস্তুকে মাথায় রেখে ভবিষ্যত পরিকল্পনা গড়া হবে। গোটা বিষয়টি নিয়ে একটি পরিকল্পনা করে তা রাজ্য সরকারকে পাঠানো হবে। অনুমোদন এলে সেইমত কাজ শুরু হবে। পরেশ সরকার এদিন এ ব্যাপারে একটি কমিটি করার জন্য আবেদন রাখেন। তিনি বলেন, রাজ্য থেকে বড় প্রকল্প আহ্বান করা হচ্ছে। এব্যাপারে একটি বড় পরিকল্পনা করা হলে অনুমোদনের জন্য অসুবিধা হবে না।

অপরদিকে, বিধায়ক খোকন দাস জানিয়েছেন, বর্ধমান পুরসভার ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়েছে। আগে তাঁরা এই সংস্কারের কাজ শুরু করতে চান, পরে অন্যান্য পঞ্চায়েতকেও এই কাজে যুক্ত করবেন। বিধায়ক জানিয়েছেন, একটা নাগরিক মঞ্চ গড়ে পরিকল্পনা তৈরী করা হোক। তিনি সেচদপ্তরের কাছ থেকে টাকা আনার উদ্যোগ নেবেন।

Like Us On Facebook