Collected-from Internet

চোখ বন্ধ করতে পারছেন না অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে আসা পূর্ব বর্ধমান জেলার সিংহভাগ পরিযায়ী শ্রমিকরা। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠছে চারিদিকে রক্ত আর রক্ত। মৃতদেহের সারি। ইতঃস্তত, বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে রয়েছে কারও কাটা হাত, কারও কাটা পা। চারিদিক থেকে খালি বাঁচাও বাঁচাও হাহাকার। শনিবার সকালে ভাতাড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেখ সোয়েব জানিয়েছেন, ‘আমি আর মনে করতে পারছি না। ভয়ংকর ঘটনা। কখনও ভাবিনি এরকম হতে পারে। লাশের পাহাড়ের ওপর দিয়ে হেঁটে জীবন্ত ফিরেছি – এটা ভাবতেই পারছি না।’

ভাতাড়ের কালুত্তক থেকে ৯ জন রওনা হয়েছিলেন কেরালার উদ্দেশ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ সাঁতরাগাছি থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেপেছিলেন। সেখ সোয়েব, সেখ সবুর, সরাফত সেখরা জানিয়েছেন, সাড়ে ৬টা নাগাদ বালেশ্বর স্টেশনে পৌঁছায় ট্রেনটি। তাঁদেরই কয়েকজনের খিদে পাওয়ায় তাঁরা খাবার ব্যবস্থা করছিলেন। ৩-৪ মিনিট বালেশ্বরে ট্রেনটি দাঁড়িয়েই রওনা হয়। ১২০ কিমিরও বেশি গতিতে ট্রেন ছুটছিল বলে তাঁদের মনে হয়। বালেশ্বর স্টেশন থেকে প্রায় ৪০ কিমি এগিয়ে যাওয়ার পর পরপর দুবার ভয়াবহ আওয়াজের সঙ্গে ঝাঁকুনি। এরপরই তাঁদের এস-১ কামরাটি তালগাছের মত খাড়া হয়ে গেল। তাঁরা কামরার মধ্যেই ছিটকে পড়লেন।এরপর জানালা ভেঙে তাঁরা যখন বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করলেন দেখলেন একটা মালগাড়ির ওপর তাঁদের কামরাটি লম্বভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁদের কামড়ার পিঠের ওপর এস-২ কামরা। কোনোরকমে জানালা ভেঙে বেড়িয়ে আসতেই চারিদিকে কেবলই চিৎকার। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা এলাকা। সরাফত সেখ জানিয়েছেন, এই অবস্থায় তিনি ৪ জনকে উদ্ধার করেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গীদের খুঁজে বের করতে হবে বলে তিনি বেড়িয়ে আসেন। এরপর ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে তাঁরা ৯ জনই একজায়গায় জড়ো হন। তারপর তাঁরা সেখান থেকে চলে আসেন রাস্তায়। সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন এবং জরুরী কাগজপত্র ছাড়া কোন ব্যাগপত্র, লাগেজই তাঁরা ফিরে পাননি। সেখান থেকে বাসে চেপে তাঁরা আসেন কলকাতায়। কলকাতা থেকে শনিবার সকালে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু আতঙ্কে তাঁরা চোখ বন্ধ করতে পারছেন না। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে আসছে রক্ত, মৃতদেহ আর অর্তনাদ – বাঁচাও বাঁচাও।

শুক্রবার ওড়িশার বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে প্রশাসনিক তরফে খোলা হয়েছে হেল্প ডেস্ক। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবরে প্রায় ১০৯ জন জেলা থেকে ওই ট্রেনে রওনা হয়েছিলেন। তার মধ্যে ৬জন মারা গেছেন। এই ১০৯ জনের মধ্যে গুরুতর আহত রয়েছেন ২০জনেরও বেশি। এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ প্রায় ১০জন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার জন্য সবরকমের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Like Us On Facebook