বাবা দুরারোগ্য লিভারের রোগে আক্রান্ত। পারিবারিক আয় সীমিত হয়ে পড়ায় অর্থসঙ্কটে গোটা পরিবার। অস্বচ্ছল পরিবারের একমাত্র মেয়ে সব বাধা অতিক্রম করে দুর্গাপুরের বিধান নগর গভর্নমেন্ট স্পন্সরড স্কুলের মেধাবী ছাত্রী অনন‍্যা মৈত্র এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৪৮ নম্বর পেয়ে স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে। অনন‍্যার বাবা অমিত মৈত্র একজন গুণী চিত্রকর। মা তন্দ্রা মৈত্র গৃহবধূ। বিগত পনেরো বছর ধরে অমিতবাবু লিভারের জটিল রোগে আক্রান্ত। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে অনন‍্যা নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে‌ চরম অধ‍্যবসায় এবং পরিশ্রমের ফলস্বরূপ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৪৮ নম্বর পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে।

বাবা ও মায়ের সঙ্গে অনন্যা

অন‍ন্যা বিজ্ঞান ‌নিয়ে পড়তে চায়।অনন‍্যার সাফল্যে দুর্গাপুরের সর্বস্তরের মানুষ তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পশ্চিম বর্ধমান জেলার এসএফআই নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই অন‍ন্যার পড়াশোনায় সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানান পশ্চিম বর্ধমান জেলা এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক মৈনাক চট্টোপাধ্যায়। অনন্যার পড়শি ও সমাজসেবী অলীক রায় জানিয়েছেন, মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলার পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের আপ্ত সহায়ক সোমনাথ পাল ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হওয়ায় অনন্যার পরিবারের আর্থিক অনটনের মধ্যেও মাধ্যমিক পরীক্ষায় অনন্যার বিশেষ সাফল্যের খবর মন্ত্রীর কানে পৌঁছলে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও অনন‍্যার পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন।

সুমন গড়াই

অপরদিকে, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের ইছাপুর হাইস্কুলের ছাত্র সুমন গড়াই আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে দুরে সরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ৬৬৮ নম্বর পেয়ে স্কুলের মাথা উঁচু করেছে। সুমন একজন সফল চিকিৎসক হতে চায়। সুমনের বাবা দীনমজুর। অল্প আয়ে সংসার চলে।সুমনের চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ৯৪% নম্বর পেয়েও সেই স্বপ্ন কিভাবে পূরণ হবে তা ভেবে পাচ্ছে না সুমন ও তার পরিবার।সুমন মাধ্যমিকেও স্কুলের সেরা রেজাল্ট করেছিল। তাই বঙ্গীয় নব উন্মেষ প্রাথমিক শিক্ষা সংঘের সদ‍্যসরা দুর্গাপুর মহকুমা কার্যালয়ে মহাকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুমনের পাশে থাকার অনুরোধ জানান। দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক সুমনের ভবিষ্যৎ গড়তে মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু হওয়া কেরিয়ার গাইডেন্স অ্যাকাডেমিতে সুমনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সফল পড়ুয়াদের সম্বর্ধনা

দুর্গাপুরের এসবিএসটিসি গ‍্যারেজ সংলগ্ন নেপালি পাড়া হাইস্কুলের ছাত্রী দিনমজুরের মেয়ে দীপাঞ্জলি সিং এবার উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া রেজাল্ট করে সকলকে চমকে দিয়েছে। দীপাঞ্জলির প্রাপ্ত নম্বর ৪২৮। দুর্গাপুর স্টেশন সংলগ্ন সিনেমা রোডের আম্বেদকর কলোনির বাসিন্দা দীপাঞ্জলির পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল দীপাঞ্জলিকে শুভেচ্ছা জানান। দীপাঞ্জলির উচ্চশিক্ষা এগিয়ে নিয়ে যেতে বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি নেপালি পাড়া হিন্দি হাইস্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পায়েল মিশ্র এবার সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়ে ৬১০ নম্বর পেয়েছে। পায়েল দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের মেয়ে। স্বল্প আয়ের মধ্যে বড় হয়ে ওঠা পায়েল মেধার জোরে স্কুলের সেরা স্থান দখল করেছে। বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল পায়েলের বাড়ি গিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান এবং পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন। বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের উদ্যোগে এলাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সফল ছাত্র-ছাত্রীদের সম্বর্ধনাও দেওয়া হয়।

বেনাচিতি নেতাজি হিন্দি বিদ‍্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ববিতা কুমারী ৪৭২ নম্বর পেয়েছে। পায়েল ও ববিতাকে দুর্গাপুর নগর নিগমের মেয়র পারিষদ রাখি তেওয়ারি ও ধর্মেন্দ্র যাদব অভিনন্দন জানান। দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ অগস্তিও ববিতা ও পায়েলের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

পায়েল ও ববিতাকে রাখি তেওয়ারি ও ধর্মেন্দ্র যাদবের অভিনন্দন

Like Us On Facebook